পঞ্চাশের কম শিক্ষার্থী খুলনার ৪৬ বিদ্যালয়ে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র তিনজন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল একজন। এ বছর দুজন বেড়ে তা হয়েছে তিনজন। স্কুলটিতে শিক্ষক রয়েছেন তিনজন। এরমধ্যে একজন পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলে স্থানান্তরিত হয়েছেন। বাকি দুজন এই স্কুলেই রয়েছেন। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না রানী বলেন, স্কুলটির আশপাশে জনবসতি কম। হাওড়ের মধ্যে একটি দ্বীপে স্কুলটির অবস্থান। এক সময় এখানে জনসংখ্যার আধিক্য ছিল। সে সময় ৬০ জনের মতো ছেলেমেয়ে ছিল স্কুলে, যাদের সবাই বড় হয়ে মাধ্যমিকে চলে গেছে। গ্রামে বর্তমানে ৫০টির মতো পরিবারের বাস। গত কয়েক বছরে গ্রামটিতে শিশু জন্মের হার একেবারেই কম। ফলে নতুন শিশু না থাকায় স্কুলটির শিক্ষার্থীও আর বাড়ছে না।

স্বপ্না রানী বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমাদের কাছে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। আমরা সেই তথ্য জমা দিয়েছি। সম্ভবত আমাদের স্কুলটিকে পার্শ্ববর্তী স্কুলের সঙ্গে একীভূত করে দেওয়া হবে। তখন দুই স্কুল মিলে ক্লাস নেওয়া হবে।

তবে একটু ভিন্ন চিত্র কয়রা উপজেলার বেদকাশী ইউনিয়নের শাকবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলটিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৫ জন। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল্লাহ বলেন, স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন চারজন। এই স্কুলটি গড়ে উঠেছে পাশাপাশি থাকা তিনটি গ্রাম নিয়ে। গ্রামগুলো একেবারেই প্রত্যন্ত এলাকায়। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ সচেতন ও শিক্ষিত। এখানে জন্মহার কম। এর বাইরে গ্রামটি একটি দ্বীপ বেষ্টিত এলাকায়। ফলে শুধু এই গ্রাম থেকে কাউকে বের হতে নদী পার হয়ে যেতে হয়। ফলে বাইরের গ্রাম থেকে এসে নদী পার হয়ে কোনো শিশুর স্কুল করা অনেকটা কঠিন। পার্শ্ববর্তী স্কুলটিও আড়াই কিলোমিটার দূরে। এজন্য এখানে শিক্ষার্থী কম।

শুধু এ দুটো স্কুলই নয়। খুলনা জেলাতেই এমন ৪৬টি স্কুল রয়েছে যাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনের কম। আর বিভাগে এ সংখ্যা ৭৬। এসব স্কুলের মধ্যে বেশিরভাগই ২০১৩ সালে জাতীয়করণের আওতায় পড়েছে। জাতীয়করণকৃত স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী কম বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব কম শিক্ষার্থীর স্কুলের সঙ্গে পাশ্ববর্তী স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভাগাভাগি করে ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ৫০-এর কম শিক্ষার্থী রয়েছে এমন প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৫টি। কয়রা উপজেলায় ৪টি, তেরখাদা উপজেলায় ৩টি, পাইকগাছা উপজেলায় ৬টি, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ৭টি ও রূপসা উপজেলায় ১টি।

খুলনার কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, যেসব স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম সেসব স্কুল একটু ভিন্নভাবে গড়ে উঠেছে। কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা গোষ্ঠীর জন্য এসব স্কুল স্থাপিত হয়েছিল। অথবা যখন বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল তখন সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসংখ্যা বেশি ছিল। পরে এসব এলাকায় জনসংখ্যা কমতে থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যায়।

খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, খুলনা জেলায় ১ হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৫০-এর কম শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৬টিতে। খুলনা বিভাগের মধ্যে এমন কম শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় রয়েছে ৬ জেলায়। এরমধ্যে বাগেরহাটে ৩টি, সাতক্ষীরায় ৩টি, যশোরে ১৬টি, ঝিনাইদহে ২টি ও নড়াইলে ৬টি।

স্কুলগুলোতে কম শিক্ষার্থী থাকার বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসলেম উদ্দিন বলেন, বেশকিছু স্থানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। এগুলোর জন্য প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি সামাজিক কারণও রয়েছে। ফলে ওইসব স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। শিক্ষকরাও অনেকটা গা ভাসিয়ে কাজ করছেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব স্কুলে শিক্ষার্থী কম সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী স্কুলের সঙ্গে একীভূত করে ক্লাস নেওয়া হবে। এর ফলে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হবে ও পাঠ গ্রহণে আগ্রহ বাড়বে।

শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে স্কুলগুলোর দূরত্ব বিবেচনায়। ৫০ জন শিক্ষার্থীর কম বিদ্যালয়গুলোকে চিহ্নিত করে আমরা তালিকা পাঠাচ্ছি মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে যে নির্দেশনা দেবে সেভাবেই বাস্তবায়ন করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038042068481445