পদবি ও বেতন বৈষম্যের শিকার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা। স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারি দপ্তরে পদবি ও বেতন বৈষম্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না বলে মন্তব্য গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মো. নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারি দপ্তরে পদবি ও বেতন বৈষম্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই বৈষম্য সংবিধানের চরম লঙ্ঘন এবং স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পদবি ও বেতন বৈষম্য নিরসন এবং বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-কমিশন গঠন’ শীর্ষক আলোচনা সভা গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিপি মো. নুর এসব কথা।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে একই পদের মধ্যে পদবি বৈষম্য থাকা উচিত নয়। ২৯ বছর পূর্বে সচিবালয়ে প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী ও সমমানের পদবি পরিবর্তন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা করা হলেও অধিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠান, সংস্থার একই পদের পদবি প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, সহকারী, উচ্চমান সহকারী কাম ক্যাশিয়ার, সাঁটলিপিকার, হিসাবরক্ষক ও সমপদগুলো পরিবর্তন না করা একটি চরম বৈষম্য।
নুর বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা থাকা দরকার। যদি কর্মচারীদের ন্যূনতম চাহিদাগুলো নিরসন না হয়, তাহলে তাদের থেকে ভালো সেবা প্রত্যাশা করা ঠিক নয়।
অনুষ্ঠানে গণকর্মচারীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে নুর বলেন, নির্বাহী আদেশে সচিবালয় সুপ্রিমকোর্ট, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), গণভবন ও বঙ্গভবন এর কর্মচারীদের ন্যায় অন্যান্য দপ্তরের কর্মচারীদের পদবি ও বেতন বৈষম্য অনতিবিলম্বে নিরসন করতে হবে, যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত এবং সহসভাপতি বীর মুক্তিযুদ্ধা মো. হাবিবুর রহমান উক্ত দারির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন এবং গণঅধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি আবু নাসির খান বলেন, সারা দেশে এক ও অভিন্ন পদবি ছিলো কিন্তু তৎকালিন সরকার নির্বাহী আদেশে ১৯৯৫, ১৯৯৭, এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রজ্ঞাপন দ্বারা শুধু সচিবালয়ের প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, বাজেট পরীক্ষক পদগুলোকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং স্টেনোগ্রাফার পদটি ব্যক্তিগত কর্মকর্তা
নামে পদবি পরিবর্তনসহ বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে প্রজাতন্ত্রে পদবি ও বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি করে, যার ধারাবাহিকতায় পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), সুপ্রিমকোর্ট, গণভবন ও বঙ্গভবনের প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী পদগুলোকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে।
এসব বৈষম্য নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩ বারের সুপারিশ থাকা সত্বেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দীর্ঘ ২৯ বছরের বৈষম্য নিরসন না করে পত্র চালাচালির মাধ্যমে কালক্ষেপণ করে আসছে। আবু নাসির খান আরো বলেন, পাঁচ বছর অন্তর অন্তর পে-স্কেল দেয়ার কথা থাকলেও সরকার ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে বৈষম্যমূলক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ পে-স্কেল দিয়ে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের বঞ্চিত করছে। ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্য দশগুণ বৃদ্ধি পেলেও কর্মচারীদের বেতন বাড়েনি। প্রায় দশ বছর পে-স্কেল না দেয়ায় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্বাধীনতার সুফল সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে পদবি বৈষম্য নিরসনের বিকল্প নেই এবং ৯ম জাতীয় পে-কমিশন গঠন সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবি বলেও জানান তারা