পদোন্নতিতে বৈষম্য দূর করার দাবি বিসিএস ডাক ক্যাডারদের

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

শূন্য থাকা সত্ত্বেও গত দুই বছরে বিসিএস (ডাক) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকেও পদোন্নতি প্রদান করা হয়নি। অথচ ডাক বিভাগের সুবিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সাশ্রয়ী মূল্যে জরুরি ডাক ও আর্থিক সেবা দেশের প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে আসছে। কিন্তু জনবল সংকট, প্রশাসনিক সংস্কারের অভাব এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে এ সার্ভিসের প্রত্যেকটি কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট ক্যাডাররা জানিয়েছেন, ডাক বিভাগের মহাপরিচালক গ্রেড-১-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি অধিকাংশ সময় অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত মহাপরিচালক গ্রেড-২-এর একটি পদ থাকলেও পদ সৃষ্টির পর থেকে এ পদে কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়নি। পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টমাস্টার জেনারেল/সমমান (গ্রেড-৩)-এর মোট ১২টি পদের মধ্যে ৯টি পদই দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে, যা ডাক সার্ভিসের ইতিহাসে নজিরবিহীন। যথাসময়ে ধারাবাহিক পদোন্নতি ব্যাহত হওয়ার কারণে এ ক্যাডারের ১৯৬টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৯৩টি পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যথাসময়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় দেশের ৩৯টি জেলা এবং সব উপজেলায় এখনো ১ম শ্রেণির কোনো পদ সৃষ্টি হয়নি, বিধায় ৩য় শ্রেণির কর্মচারী দ্বারা ডাকঘরগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে, যেখানে অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ১ম শ্রেণির একাধিক পদ রয়েছে। দেশে আগের চারটি প্রশাসনিক বিভাগের পর নতুন আরো চারটি বিভাগ সৃষ্টি হলে অন্য সব সরকারি দপ্তরের নতুন চারটি বিভাগে ডাক বিভাগের বিভাগীয় দপ্তর পদ তৈরি হলেও নতুন বিভাগসমূহে ডাক বিভাগের কোনো বিভাগীয় দপ্তর এখন পর্যন্ত সৃষ্টি করা হয়নি। এ কারণে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় মনিটরিং ব্যাহত হচ্ছে। জরুরি ডাক ও আর্থিক সেবাসমূহ নাগরিক চাহিদার নিরিখে গুণমান বজায় রেখে প্রদান করা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিসিএস (ডাক) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অন্য বিসিএস ক্যাডারের তুলনায় পদোন্নতি ও অন্যান্য প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (পররাষ্ট্র), বিসিএস (কৃষি), বিসিএস (সওজ), বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব), বিসিএস (গণপূর্ত), বিসিএসসহ (আনসার) অন্যান্য ক্যাডারের ৩৭তম

ব্যাচ ২০১৯ সালে ৯ম গ্রেডে যোগদানের পর ফিডার পদে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০২৪ সালে ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছেন। অন্যদিকে ডাক ক্যাডারের ৩৩তম ব্যাচ ২০১৪ সালে যোগদান করে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে (৬ষ্ঠ) পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ৯ম গ্রেডেই কর্মরত আছেন। একইভাবে, অন্য ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০২১ সালে ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়ে থাকলেও ডাক ক্যাডারের একই ব্যাচের কর্মকর্তারা বর্তমানে ৬ষ্ঠ গ্রেডে কর্মরত আছেন। অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসে ৯ম গ্রেড থেকে ৫ম গ্রেডে পদোন্নতি পেতে যেখানে ১০ থেকে ১১ বছর সময় লাগে, বিসিএস ডাক ক্যাডারে সে পদোন্নতি পেতে ২০ বছরের বেশি সময় লেগে যায়। এ বৈষম্য বিসিএস ডাক ক্যাডারের সব পর্যায়ে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ বৈষম্যের কারণে বিসিএস (ডাক) ক্যাডারের সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা আর্থিক ও সামাজিকভাবেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে বিসিএস (পোস্টাল) অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এইচ এম ইকবাল মাসুদ বলেন, বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে বিসিএস (ডাক) ক্যাডারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈষম্যের দ্রুত অবসান চেয়ে গত ১৮ আগস্ট প্রথমে সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সঙ্গে এবং পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট দাবি উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে আর্থিক সুবিধাসহ ব্যাচভিত্তিক ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও পরবর্তী সময়ে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাচভিত্তিক নিয়মিত পদোন্নতি প্রদান এবং অন্যান্য সরকারি দপ্তরের মতো সব বিভাগে বিভাগীয় দপ্তরসহ পদ সৃজনের দাবি উপস্থাপন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সচিব তার মন্ত্রণালয়ের এক্তিয়ারভুক্ত ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিসহ অন্য দাবিগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করার আশ্বাস প্রদান করেছেন। যেসব দাবি অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেগুলো অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহে প্রেরণসহ কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। একইভাবে বিসিএস (ডাক) ক্যাডারের সদস্যরা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ডাক ক্যাডারের সুনির্দিষ্ট দাবি নিয়ে কথা বলেন। উপদেষ্টা ধৈর্য সহকারে বিসিএস (ডাক) ক্যাডারের সুনির্দিষ্ট দাবিসমূহ শোনেন এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সচিব ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029950141906738