দেশের গৌরব ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ক্যাম্পাসে কোনো আনন্দ মিছিল বা শোভাযাত্রা দেখা যায়নি। এমনকী ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোরও কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত সিনেট অধিবেশন চলায় তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তবে শনিবার (২৫ জুন) রাত সোয়া ৮টায় এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস থেকে এক অভিনন্দন বার্তা পাঠানো হয়।
বিশেষ এই দিনে ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি না থাকার ক্ষোভ জানিয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আমাদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার। অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সশরীরে পদ্মা পাড়ে যেতে পারেনি। আমাদের আশা ছিল, ক্যাম্পাসে কোনো আনন্দ শোভাযাত্রা থাকবে, সেখানে অংশ নিয়ে সশরীরে পদ্মাপাড়ে যাওয়ার আনন্দ অনুভব করবো। কিন্তু এরকম কোনো আয়োজন না থাকায় অনেকটা হতাশ হয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এই ক্যাম্পাসে অনেক ঠুনকো ইস্যুতেই আন্দোলন হয়, মিছিল হয়, বিবৃতি দেওয়া হয়। অথচ জাতীয় একটি অনুষ্ঠানের দিনে ক্যাম্পাস নীরব। যা ভালো ইঙ্গিত বহন করে না।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি ছিল কি না জানতে চাইলে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, শাখা ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতাকর্মী প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পদ্মাপাড়ে চলে এসেছেন। কাজেই ক্যাম্পাসে আজকের দিনে কোনো কর্মসূচি দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা এখনো পদ্মাপাড়েই আছি। ক্যাম্পাসে ফিরলে বড় আকারের আয়োজন থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির সভাপতি আজীম উদ্দীন বলেন, এ উপলক্ষে আমাদের কোনো আয়োজন ছিল না। যতটুকু জানি এরকম অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে করলে বাকিরা অংশগ্রহণ করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজন না থাকায় আমরা আলাদাভাবে কিছু করতে পারিনি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো আয়োজন করা হয়নি। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে একটা বিবৃতি দেওয়ার কথা ভাবছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীর বলেন, অফিশিয়ালি কোনো আয়োজন ছিল না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে টিএসসির পক্ষ থেকে আমরা ক্যাফেটেরিয়ায় একটি বড় পর্দার ব্যবস্থা করেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই হয়তো সশরীরে অনুষ্ঠানে যাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আমরা যেতে পারিনি, গতকাল (শুক্রবার) রাত ১টা পর্যন্ত সিনেট অধিবেশন চলার কারণে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে আমার দাওয়াত থাকলেও শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত সিনেট অধিবেশন চলায় আর যাওয়া হয়নি। ক্যাম্পাসে কর্মসূচি বলতে বড়পর্দায় অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা করতে বলছিলাম এবং যারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবে তাদের জন্য বাস বরাদ্দ ছিল।
এদিকে, উপাচার্য অফিস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘসময় ধরে সিনেট অধিবেশন চলায় উপাচার্য শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ভোর ৪টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বাস ছিল কিন্তু তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অফিস সূত্র জানায়, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হকও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার যোগ দিয়েছিলেন কি না এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের অভিনন্দন বার্তায় উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন বাঙালির ইতিহাস ও অগ্রযাত্রার নতুন মাইলফলক। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধনের মাইলফলক স্থাপনে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রধানমন্ত্রীর নিরলস পরিশ্রম, দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্ব বিশ্ব দরবারে আমাদের সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করেছে। আমরা সবাই এতে আনন্দিত।