রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সাবেক জেলা দায়রা জজ ও দুদকের সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম দাখিল করেন।
এর আগে শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এক বিবৃতিতে জানান, রোববার সকালে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।
রোববার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এদিন বিকেল ৪টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে।
সোমবার সকাল ১০টা থেকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। পরদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।
এরপর আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার কারণে এ দলের পক্ষ থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তিনিই একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা থেকে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংসদের বিরোধী দল এ নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে না।
সংবিধানের ১২তম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর শুধু ১৯৯১ সালেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা ভোট গ্রহণ করা হয়। ওই সময় সংসদে ক্ষমতাসীন বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন ১৪০ জন। অন্য সংসদ সদস্যরা ছিলেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও অন্য সাতটি দলের। সে কারণে ভোট গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়নি।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন তিনি।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কারাবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা তদন্তে পরবর্তী সময়ে গঠিত কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
তিনি ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের মৃত্যুতে খালি থাকা প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়।
তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র সন্তানের পিতা এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন।