দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ চলতি মাসের ৪ তারিখ রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে সপরিবারে সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে তিনি দেশে আসবেন। পুলিশের একটি সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলেই তিনি দেশের বাহিরে যাচ্ছেন বলে তার স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বলেছেন। তবে প্রভাবশালী মহলের একাংশকে দেশ ত্যাগের বিষয়টি অবহিত করেই তিনি দেশ ছেড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করে বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দুদকে তলব করাসহ সবকিছুর বিষয়ে তিনি আগাম ওয়াকিবহাল ছিলেন। প্রভাবশালী একটি মহল তাকে আগাম সবকিছু বলে দিয়েছিল। তবে তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খুবই বিব্রত। তিনি আরো বলেন, সব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি একটি আইনজীবী প্যানেল ঠিক করেছেন। সরকারের শীর্ষ মহলকেও বুঝানোর চেষ্টা করছেন যেভাবে বলা হচ্ছে সেইভাবে তিনি কোন অপরাধ করেননি। দুদকের তলব করার বিষয়ে তিনি সময় চাইতে পারেন বলে আমরা শুনেছি। হয়তো তার আইনজীবী দুদকে আবেদন করতে পারেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে তিনি দেশে আসবেন। আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশও আছে অস্বস্তিতে।
মেধাবী ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন বেনজীর আহমেদ। ছিলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। দায়িত্ব পালন করেছেন এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালকের। ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারও। পুলিশের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রভাবশালী। তার সামনে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা কথা বলতে ভয় পেতেন। কিন্তু দায়িত্ব পালনের সময় অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তিনিসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে তলবও করেছে।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগ ওঠার পর বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি ক্রোক বা জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। একই দিন বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়। তা ছাড়া জীশান মীর্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা (৯১ একর) জমি এবং বেনজীর পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দেয় আদালত। বেনজীর পরিবারের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়। সাভারে তাদের কিছু জমিও পড়েছে একই আদেশের মধ্যে। ইতিমধ্যে সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন বেনজীর আহমেদ। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে র্যাব এবং র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। ওই সময় আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।