যোগ্যতা সাপেক্ষে কোনো ধরনের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই মৌখিক ও ব্যবহারিক (ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন) পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম চলতি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকেই সুযোগ পেতে যাচ্ছেন খেলোয়াড়রা। এর ফলে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বন্ধ থাকা খেলোয়াড় কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি জটিলতার অবসান হলো।
বুধবার থেকে খেলোয়াড় কোটার আবেদন শুরু হয়েছে। যা চলবে আগামী ২৪ জুলাই পর্যন্ত। জানা গেছে, এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সনদপত্রসহ সাদা কাগজে সংশ্লিষ্ট ভর্তি পরীক্ষার ইউনিট প্রধান বরাবর আবেদন করতে হবে। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে প্রার্থীদের সরাসরি মৌখিক ও ব্যাবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে ভর্তির সুপারিশ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. শাহজাহান আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রায় ১৯-২০ বছর ধরে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তিতে আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিলো। তবে এবার সেই সীমাবদ্ধতা কেটে গেলো, সেই সঙ্গে খেলোয়াড় কোটার ভর্তি সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেলো। খেলোয়াড়রা ভাইভা ও প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা দিয়ে ডিন স্যারদের মাধ্যমে ভর্তি হতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, যেসব শিক্ষার্থী একাডেমিক ফল ও খেলাধুলাতে ভালো। তাঁরা এখানে সুযোগ পাবেন। তবে নির্ধারিতভাবে কতজন খেলোয়াড় কোটাতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে, এ মুহুর্তে বলা যাচ্ছেন। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেধাবী ও যোগ্য খেলোয়াড়দেরই সুযোগ দেবেন। তাছাড়া অনিয়মের যে বিষয়টি চলে আসে, সেটির হয়তো পুনরাবৃত্তি হবে না। কারণ সব খেলোয়াড়দের ছবি ও যাবতীয় তথ্য ওয়েবসাইটেই রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অতীতে বিকেএসপির শিক্ষার্থীরা দরখাস্ত করলে তাদের যাচাই-বাছাই নেয়া হতো। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে বিকেএসপির পাশাপাশি জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
খেলোয়ারদের জন্য নির্ধারিত কোনো আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক বাছির বলেন, খেলোয়াড়দের জন্য সচারাচর আসনসংখ্যা নির্ধারণ করা থাকে না। তবে খেলোয়াড়দের দরখাস্ত অনুযায়ী আমরা এই সিদ্ধান্তটি নেবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও ক্রীড়া কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, খেলোয়াড় কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে ভর্তিতে অনিয়মত হতো। খেলোয়াড় না হয়েও নানাভাবে জাতীয় দলের সনদ নিয়ে এসে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যেত। এবার এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক নীতিমালা করা হলো, যার মধ্য দিয়ে খেলোয়াড় কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এ কোটায় আবেদনকারীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না।
আবেদনের যোগ্যতা :
ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের জাতীয় দলের বর্তমান খেলোয়াড় হতে হবে। এছাড়া প্রার্থীদের বিগত তিন বছরের মধ্যে জাতীয় দল, জাতীয় ‘এ’ দল এবং বয়সভিত্তিক অনুর্ধ্ব ২৩, ২০, ১৯, ১৭, ১৬ দলের সদস্য হয়ে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং এ্যাথলেটিক্স, ব্যাডমিন্টন, টেবিল-টেনিস, সাঁতার, টেনিস, দাবা, ক্যারমসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জাতীয় র্যাংকিং অনুযায়ী ১ থেকে ৫ এর মধ্যে থাকা প্রার্থীরাও ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। আবেদনের শেষ তারিখে ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের বয়স অনুর্ধ্ব ২৩ বছর হতে হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিট ভিত্তিক ভর্তির ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।
ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের জন্য কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ক্ষেত্রে কলা অনুষদের ডিন অফিস, বিজ্ঞান ইউনিটের ক্ষেত্রে আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অফিস, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ক্ষেত্রে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অফিস এবং চারুকলা ইউনিটের ক্ষেত্রে চারুকলা অনুষদের ডিন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া, ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট https://admission.eis.du.ac.bd এ পাওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, খেলোয়াড় কোটা ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী ওয়ার্ড, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতিনাতনি, উপজাতি-ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হরিজন ও দলিত সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী (দৃষ্টি, বাক, শ্রবণ, শারীরিক, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারস ও ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়া) বিশ্ববিদ্যালয় আন্ডার গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে কোটায় ভর্তির আবেদনের সুযোগ পেয়ে থাকেন।