ক্লাসে উপস্থিতির হার কম থাকলেও পরীক্ষা নেওয়ার আবদার করেছিলেন এক ছাত্রলীগের কর্মী। সেই সুযোগ না দেওয়া বিভাগে ভাঙচুর চালান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে দুই সাংবাদিককেও মারধর করা হয়েছে। আহত অবস্থায় তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত দুই সাংবাদিক হলেন রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ জার্নালের জেলা প্রতিনিধি আবু সাইদ রনি এবং রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ও রাজশাহী পোস্টের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল আলীম। রনি রামেক হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে এবং আলীম ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. আবদুল খালেক জানান, ক্লাসে উপস্থিতির হার কম থাকলে কোনো বিভাগেই ইনকোর্স পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ রানাকেও বিভাগে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। গতকাল দুপুরে মাসুদ রানা তাঁর কাছে এসেছিলেন পরীক্ষা দেওয়ার দাবি নিয়ে। তিনি তাঁকে বুঝিয়ে পাঠান যে একজনকে পরীক্ষা দিতে দিলে সবাইকে এই সুযোগ দিতে হবে। তাই এটা করা যাবে না।
এরপর অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মাসুদ রানা অন্যদের ডেকে নেন। তারপর তাঁরা গণিত বিভাগে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা ফুলের টব ভাঙচুর করতে শুরু করেন। খবর পেয়ে অধ্যক্ষ নিজে গিয়েই তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা এসে ভাঙচুর করা ফুলের টবের ছবি তুলছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা দুই সাংবাদিককে মারধর করেন এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। পরে আহত দুই সাংবাদিককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফরের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী সাঈদ হাসান আশিক, মো. সাহেদুজ্জামান, আশিকুর রহমান সজিব, সাজেদুর রহমান সিজার, মো. মেহেদী, আবদুর রহিম, মো. জাকারিয়া ও সাব্বির হোসেন সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকেরা।
রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীদের ওপর আঘাত এসেছে। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই। হামলাকারীরা যেহেতু কলেজের শিক্ষার্থী, তাদের ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর পাশাপাশি আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে চাই।’
জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফর বলেন, ‘পরীক্ষা দিতে না দেওয়ার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর মধ্যে ছাত্রলীগের কোনো কর্মী থাকতে পারে। এ রকম কেউ থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’