পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন না শিক্ষামন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন না শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। রোববার সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, পরীক্ষা আইন অনুযায়ী কোনো মন্ত্রী, সচিব বা অন্য কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেন না। এজন্য মন্ত্রী হিসেবে আমিও যাবো না। পরীক্ষা কক্ষে শুধু পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরাই থাকবেন।

প্রসঙ্গত, সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দেখতে গত শুক্রবার ময়মনসিংহের একটি কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী। ওই পরিদর্শনের ছবি দ্রুতই সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকমে এ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। রোববার ওই ঘটনা নিয়ে ‘সম্পাদকের কাঠগড়া’ কলামে বিশেষ নিবন্ধ লেখেন দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রধান সম্পাদক ও দৈনিক শিক্ষাডটকম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান। যেটার শিরোনাম ছিলো ‘পরীক্ষাসন্ত্রস্ত জাতির পরীক্ষার হলে শিক্ষক প্রতিমন্ত্রীর ফটোসেশন’। নিবন্ধনটি প্রকাশের পর শিক্ষা পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেন। 

শিক্ষা মন্ত্রী বললেন- শুধু আমি নই, পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজের লোক ছাড়া অন্য কেউ কোনো কেন্দ্রে যেতে পারবেন না। একজন মন্ত্রী যাওয়া মানে একটি ঝামেলা তৈরি করা। কারণ মন্ত্রী যে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন সেখানে গণমাধ্যমসহ বহু মানুষ যান। পাশাপাশি আরো কিছু প্রক্রিয়া আছে, যেগুলোর কারণে ওই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যায়। 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শুরুর দিনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অফিস করবো। সেখানে বসেই পরীক্ষার খবরাখবর নেবো। সুনির্দিষ্ট একটি কেন্দ্রে গিয়ে লাভ নেই। বরং মন্ত্রী কোনো কেন্দ্রে না গেলে মিডিয়া ঘুরে ঘুরে কেন্দ্রগুলোর ওপর রিপোর্ট করবে। সেখানে যদি অনিয়মের চিত্র ভেসে আসে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে। 

আরো পড়ুন: পরীক্ষাসন্ত্রস্ত জাতির পরীক্ষার হলে শিক্ষক প্রতিমন্ত্রীর ফটোসেশন

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবেন। এসএসসি, দাখিল, এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় ৩ হাজার ৭০০টি কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৭৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। 

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা আয়োজনে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।  ১২ মার্চ পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন জেলা পর্যায়ের ট্রেজারি ও উপজেলা বা থানা পর্যায়ে থানা হেফাজতে সংরক্ষণ করা হবে। থানা বা ট্রেজারি থেকে পুলিশ প্রহরায় প্রশ্ন কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। 

জানা গেছে, ট্রেজারি-থানা থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীরা কোনো মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং প্রশ্নপত্র বহন কাজে কালো কাঁচযুক্ত মাইক্রোবাস বা যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। তাছাড়া প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হবে। ট্যাগ অফিসার ট্রেজারি, থানা হেফাজত হতে কেন্দ্র সচিবসহ প্রশ্ন বের করে পুলিশ প্রহরায় সব সেটের প্রশ্ন কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নের সেট কোড ঘোষণা করা হবে। সে অনুযায়ী কেন্দ্র সচিব, ট্যাগ অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট বিধি অনুযায়ী খুলবেন। 

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো পরীক্ষার্থী বা কক্ষ পরিদর্শনে দায়িত্বে থাকা কোনো শিক্ষক মুঠোফোন বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্রসচিব ছবি তোলা যায় না ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না এমন ফিচার ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। 

সভায় সিদ্ধান্তের বরাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্ত্রণালয় আরো বলছে, পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীদের মোবাইল, মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যবহারের অনুমতিবিহীন যে কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে, এ নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস বা এ সংক্রান্ত গুজব ঠেকাতে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে নজরদারি। এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব বা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর ওপর নজরদারি জোরদারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রশ্নফাঁস বা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048980712890625