পরীক্ষামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন শুরু জুলাইয়ে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনতে আগামী জুলাই থেকে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেট বক্তব্যে এ কার্যক্রম শুরুর কর্মপরিকল্পনা জানাবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সোমবার (২৯ মে) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মেসবাহুল হক। 

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের দাপ্তরিক আদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভবনের কোনো একটি তলায় তাদের দাপ্তরিক কার্যালয় স্থাপনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সম্পর্কিত আইনের বিধিমালার খসড়া তৈরির কাজও প্রায় শেষ।

আইনের আওতায় ছয় ধরনের প্রোডাক্ট স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করেছে অর্থ বিভাগ। দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী প্রায় ১০ কোটি নাগরিককে ৬টি শ্রেণি অনুযায়ী ভাগ করে এই স্কিম নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো– বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক চাকরিজীবী পেনশনার, প্রবাসী/অনিবাসী পেনশনার, শ্রমিক শ্রেণি, অপ্রাতিষ্ঠানিক জনগোষ্ঠী, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিভুক্ত জনগোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থী।

প্রতিটি স্কিম হবে স্বতন্ত্র। সব স্কিমে একটি ন্যূনতম চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। কেউ চাইলে বেশিও জমা করতে পারবে। কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত তহবিলে সংশ্লিষ্ট প্রোডাক্ট স্কিমের হিসাবে যাঁর যত বেশি চাঁদা জমা পড়বে, তাঁর আর্থিক সুবিধা পাওয়ার হারও তত বেশি হবে।

আগামী জুলাইয়ে আগ্রহী পেনশনারদের নিয়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। শুরুতে মডেল জেলা হিসেবে রাখা হতে পারে ঢাকা এবং দেশের অন্য যে কোনো একটি জেলাকে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের মেয়াদ এক থেকে দুই বছর হতে পারে। এর সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে পরে তা সারাদেশে বিস্তৃত করা হবে। তবে শুরুর প্রক্রিয়াটি হবে সীমিত পরিসরে। ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ সারাদেশে চালু হওয়ার পর অন্তত পাঁচ বছর তা ঐচ্ছিক রাখা হবে। পরে ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এটি সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।

গত ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩’ পাস হয়। আইন অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও পেনশন স্কিমের আওতায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাসিক পেনশন সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

আইনে আরও বলা হয়, নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে। সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকার সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা এই পেনশন ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখনও সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পরিচালনায় গঠিত কর্তৃপক্ষে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাছাড়া সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে পেনশনারের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। চাঁদা কত হবে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের অংশগ্রহণ কতটুকু থাকবে কিছুই পরিষ্কার করা হয়নি। এ উদ্যোগটা খুব ভালো কিন্তু অনেক বড় কর্মযজ্ঞ হওয়ায় আরও প্রস্তুতি দরকার।

সর্বজনীন পেনশনের জন্য আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৭-১৮ খ্রিষ্টাব্দের বাজেটে একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন। চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে এটি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024280548095703