পরীক্ষার আগেই প্রধান শিক্ষকের ছেলে, সভাপতির মেয়ের নিয়োগ চূড়ান্ত

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি |

দৈনিকশিক্ষাডটকম, লক্ষ্মীপুর: কমলনগরে একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার জগবন্ধু উচ্চবিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এ ‘লোক দেখানো পরীক্ষার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, আগামী ২০ নভেম্বর এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ছেলে, ভাগনে ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির মেয়ের চাকরি আগেই 'নিশ্চিত' হয়ে গেছে । আর তা বাস্তবায়নে নীতিমালা লঙ্ঘন করে ‘গোপনীয়ভাবে' গঠন করা হয়েছে নিয়োগ বোর্ডও। এসব বিষয় নিয়ে হাবিবুর রহমান নামে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির এক সদস্য বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জগবন্ধু উচ্চবিদ্যালয়রে পাঁচটি পদে নিয়োগের লক্ষ্যে গেল অক্টোবর মাসে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পদগুলোর মধ্যে আয়া পদে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গফুর সিকদারের মেয়ে নুরনাহার বেগমসহ তিন জন, অফিস সহায়ক পদে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিনের ছেলে আবির হোসেনসহ পাঁচ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এ বি এম মঞ্জুর হোসেনের ভাগনে রিয়াজ উদ্দিনসহ তিন জন এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে সাত ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে ৯ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজশ করে সম্প্রতি কমিটির অন্য সদস্যদের না জানিয়ে গোপনীয়ভাবে নিয়োগ বোর্ড গঠন করেন। এতে নিজেদের সন্তানপ্রার্থী হওয়ার কারণে সভাপতির পরিবর্তে বিদ্যোৎসাহী সদস্য ফারুক হোসেন বাবুলকে রাখা হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয় শিক্ষক এ বি এম মঞ্জুর হোসেনকে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নিয়ম অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতম শিক্ষককেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে হয়। কিন্তু রফিকুল আলম ও মিনহাজ উদ্দিন নামে জ্যেষ্ঠ দুই শিক্ষককে রেখে তৃতীয় জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক এ বি এম মঞ্জুর হোসেনকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । তাছাড়া এ নিয়োগ পরীক্ষায় তার ভাগনে রিয়াজ উদ্দিন পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদের প্রার্থী। মূলত তার ভাগনেসহ প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিনের ছেলে ও সভাপতির মেয়ের চাকরি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যেই এ নিয়োগ বোর্ড করা হয় ।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য আজাদ উদ্দিন, হাবিবুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, হারুনুর রশিদ, রাজিয়া বেগম ও দাতা সদস্য ঈমান আলী জানান, নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ড গঠন বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন দেওয়া হয় । কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তাদের না জানিয়ে গোপনীয়ভাবে এটি গঠন করেছেন । তাছাড়া এ নিয়োগ বোর্ডে সভাপতির পরিবর্তে ফারুক হোসেন বাবুল নামে যে বিদ্যোৎসাহী সদস্যকে রাখা হয়েছে তিনি সভাপতি আপন জামাতা এবং আয়া পদের প্রার্থী নুরনাহারের ভগ্নিপতি ।

তাদের অভিযোগ, আয়া পদে পরিচালনা কমিটির সভাপতি গফুর সিকদারের মেয়ে নুরনাহার বেগম, অফিস সহায়ক পদে প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিনের ছেলে আবির হোসেন এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে নিয়োগকালীন দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ বি এম মঞ্জুর হোসেনের ভাগনে রিয়াজ উদ্দিনের নিয়োগ চূড়ান্ত করতেই এমন অনিয়মটি করা হয়েছে। আগামী সোমবার নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও এ তিন জনের নিয়োগ আগেই চূড়ান্ত হয়ে গেছে; পরীক্ষার আয়োজন অনেকটা লোক দেখানো । তাই তারা অনিয়মের মাধ্যমে গঠিন ঐ নিয়োগ বোর্ড বাতিলসহ পরীক্ষা স্থগিত করে নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ড গঠনসহ স্বচ্ছভাবে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের দাবি জানান ।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন দাবি করেন, নিয়ম অনুযায়ীই তারা নিয়োগ বোর্ড গঠন করেছেন। তবে দুই সিনিয়র শিক্ষককে রেখে নিয়োগ পরীক্ষার এক প্রার্থীর মামাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাছাড়া সভাপতির পরিবর্তে তার জামাতাকে নিয়োগ বোর্ডে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব প্রার্থীরাই কোনো না কোনো শিক্ষক বা সদস্যের আত্মীয়; এত কিছু দেখতে গেলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয় ।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) গৌতম চন্দ্র মিত্র বলেন, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন । নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ - dainik shiksha শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028729438781738