পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৭৮ ভাগ আসনই খালি, নৈরাজ্য চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে প্রায় ৭৮ শতাংশ আসনই শূন্য পড়ে আছে। ৫৬৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ৩ লাখ ৬৭ হাজার। কিন্তু এবার এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৮১ হাজার শিক্ষার্থী। ভর্তি হওয়া এসব ছাত্রছাত্রী ২২ আগস্ট প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানত দৃষ্টিভঙ্গিগত কারণে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শিক্ষার্থীরা আসছে না। অনেকেই মনে করেন, এসব প্রতিষ্ঠানে দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং কম মেধাবীরা লেখাপড়া করে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ডিপ্লোমা পাশ করে অনেকে বেকার থাকছে। এর পাশাপাশি মান্ধাতার আমলের শিক্ষাক্রম, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সংকট, হাতেকলমে শিক্ষার অভাব বা ল্যাবরেটরিতে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির ঘাটতি, চাকরির বাজারে টেকনোলজি অনুযায়ী পদ না থাকা, শিক্ষক ও হল-হোস্টেল সংকট, ৪ বছরের দীর্ঘ কোর্স প্রভৃতি এই শিক্ষার আকর্ষণ নষ্ট করছে।

 

জানা যায়, কারিগরি শিক্ষায় কিছু মৌলিক প্রতিবন্ধকতা আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ৪ বছরের কোর্স, যা পৃথিবীর কোথাও নেই। এটি সর্বোচ্চ ৩ বছর করতে হবে। আর যদি ৪ বছরই রাখা হয়, তাহলে তাদের জন্য ২ বছরের স্নাতক নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে ভর্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি বিদ্যমান অন্য সমস্যাও দূর করতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগ, ল্যাবরেটরি-ওয়ার্কশপে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নিশ্চিত ও চাকরির বাজারে পদ সৃষ্টি এবং কারিগরিতে ভর্তি অগ্রাধিকার দেওয়া না হলে কোনোদিন এই খাতে শিক্ষার্থী বাড়বে না।

জানা যায়, ডিপ্লোমা কোর্সের মেয়াদ ৩ বছর করার বিষয়ে সরকার সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একশ্রেণির মালিক ও কারিগরি সেক্টরে কর্মরত ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বাধায় উল্লিখিত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন বছরের কোর্স করা হলে বেসরকারি পলিটেকনিকের মালিকদের এক বছরের আয় কমে যাবে। অন্যদিকে চাকরির বাজারে বর্তমান পদে যারা আছেন, তারা বেশিদিন থাকতে পারবেন না-এসব আশঙ্কা থেকেই দুই গ্রুপ মিলে গেছে। এ ক্ষেত্রে কিছু ছাত্রকে ভুল বুঝিয়ে আবার কাউকে বাধ্য করে তাদের আন্দোলনে যুক্ত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেশে একসময় ৪৫টি ডিপ্লোমা কোর্সে ডিগ্রি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। বাজার চাহিদা না থাকায় বর্তমানে ২৭টি কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে বর্তমানে সরকারি পলিটেকনিক আছে ৪৯টি। এতে আসন আছে ৪৩ হাজার ৪শ। এর বিপরীতে ৮৫ হাজার আবেদন করেছিল। কিন্তু ৪১ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

আবার ৫১৫টি বেসরকারি পলিটেকনিকে আসন আছে সোয়া ৩ লাখ। ভর্তি করা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। যে কজন আবেদন করেছিল, তাদের সবাই ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সরকারিতে প্রায় আড়াই হাজার শূন্য আছে। আর বেসরকারি এই সংখ্যা ২ লাখ ৮৫ হাজার। সরকারি প্রতিষ্ঠানে আবেদনের ন্যূনতম শর্ত ছিল-এসএসসিতে জিপিএ ২.৫ পেতে হবে। বেসরকারিতে ছিল জিপিএ ২। আবেদনের শর্ত না কমালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী আরও কম পেত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন খালি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। আসনের তুলনায় আবেদনকারী কম এবং আবাসন ঘাটতি এর প্রথম কারণ। কেননা এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের প্রথম বর্ষে সিট দেওয়া হয় না। আর নানা দুর্নামের কারণে বেসরকারির প্রতি তেমন আকর্ষণ নেই শিক্ষার্থীদের।

জানা যায়, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যেসব বিভাগের চাহিদা আছে সেগুলোর কোনোটিতে আসন শূন্য থাকছে না। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ভেঙে ইলেকট্রো মেডিকেল এবং এনভায়রনমেন্ট করা হয়েছে। একই জিনিস পড়ানো হয়, কিন্তু চাকরির সার্কুলারে চাওয়া হয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা। আবার হাসপাতালে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মেরামত করবেন ইলেকট্রো মেডিকেল বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা। কিন্তু কোনো হাসপাতালে এই পদ সৃষ্টি হয়নি। ফলে উল্লিখিত দুই বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা নিয়োগ বঞ্চিত হচ্ছে। এতে সৃষ্ট বেকারত্ব ভর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061271190643311