সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে নেয়া প্রকল্পের আওতায় বান্দরবানের সাত উপজেলায় নয়টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ এবং স্কুল ভবন সম্প্রসারণের কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০১৯, ২০২০ ও ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে দরপত্র আহ্বান করা হয়। পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশও দেয় অধিদপ্তরটি। এর মধ্যে শুধু স্কুল ভবন সম্প্রসারণকাজের অগ্রগতি হয়েছে এক-তৃতীয়াংশ। তবে প্রশাসনিক ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ শেষ হয়নি। এছাড়া ভূমিসংক্রান্ত জটিলতায় তিনটি বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও আটটি বিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস নির্মাণের কাজই শুরু হয়নি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলমান প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৩২৩টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আধুনিক ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ এবং স্কুল ভবন সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বান্দরবানে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এর আগে বান্দরবান জেলার কাজগুলো তত্ত্বাবধান করত কক্সবাজার জেলা কার্যালয়। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর এমএম ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে রুমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়। ৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে কার্যাদেশের মেয়াদ ছিল প্রায় দুই বছর। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন মো. জাফর উল্লাহ ওরফে রুমার জাফর নামে এক ঠিকাদার। পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও দাপ্তরিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই ভবনটির নির্মাণ অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ।
সরজমিনে দেখা গেছে, ভবনের ছয়তলা পর্যন্ত ছাদ সম্পন্ন হয়েছে। ভবনটির নির্মাণ শ্রমিক মো. তারেক উদ্দিন বলেন, ‘ভবনে প্লাস্টারিং, দরজা, জানালা ও গ্লাস ফিটিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। কাজটির ঠিকাদার রুমার জাফর। তবে জাফরের সাব-কন্ট্রাক্টর হুমায়ুন কবির। তিন বছর ধরে আমরা কাজ করছি। আমার আগে আরো দুই-তিন গ্রুপ কাজ করেছিল। আগামী জানুয়ারির মধ্যে ভবন নির্মাণকাজ শেষ হবে।’
একই বিদ্যালয় চত্বরে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মে ইউটিমং নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে পাঁচতলা হোস্টেল ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। কাজটি করছেন মো. আলমগীর হোসেন রিপন নামে এক ঠিকাদার। তবে এখন পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন রিপন বলেন, ‘অফিস আমাকে ভবন নির্মাণের সাইট ও ড্রইং বুঝিয়ে দেয়নি। এজন্য কাজ শুরু করতে পারছি না।’
এদিকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুলাই রুমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণের কার্যাদেশ দেয়া হয় চিটাগং বিল্ডার্স করপোরেশন নামে চট্টগ্রামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার কাজটি গত বছর সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
এছাড়া ভূমিসংক্রান্ত মামলা, জায়গা সংকট ও পুরনো ভবন ভাঙা বা অপসারণ জটিলতায় বান্দরবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন এবং রোয়াংছড়ি ছাড়া অন্য আটটি বিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস নির্মাণের কাজই শুরু হয়নি। এর মধ্যে বান্দরবান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দরপত্র প্রক্রিয়া অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বান্দরবান কার্যালয়ে।
প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরনো টিনশেড ভবনসহ তৃতীয় তলা একটি ভবনের ২০ ফুট পর্যন্ত ভাঙার অনুমোদন চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি। অন্যান্য বিদ্যালয়েও অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করতে যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেগুলো দ্রুত নিরসনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঠিকাদারদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই-তিনটির কার্যাদেশ বাতিলসংক্রান্ত কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’