ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শাহ মো. আবু জাফর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে চারবারের নির্বাচিত এই এমপি পাঁচবার দল পরিবর্তন করলেন।
এর আগে আওয়ামী লীগ থেকে বাকশাল, বাকশাল থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি, সেখান থেকে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি এবং পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন।
শাহ মো. আবু জাফরের বারবার দল পরিবর্তন নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালী) আসনে বইছে নিন্দার ঝড়। এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছেন।
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা ফেসবুকে তাকে নিয়ে সমালোচনায় মেতেছেন।বোয়ালমারী পৌরসভার কামার গ্রামের বাসিন্দা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ফরিদপুর জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্নী খানম আবু জাফরকে উদ্দেশ করে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রবাদে আছে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু!’ ছাত্রদলের বোয়ালমারী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক শেখ মো. তপু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজ থেকে আমরা বোয়ালমারী উপজেলা ছাত্রদল এই অর্থলোভী, আওয়ামী লীগের দালাল আবু জাফর নামক মীরজাফরকে বোয়ালমারী উপজেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।’
বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির নেতা সামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অতি সম্প্রতি আপনাদের সবার মতো আমিও শাহ মো. আবু জাফরের এই দুঃসময়ে দলত্যাগের সিদ্ধান্তে অত্যন্ত মর্মাহত ও বাকরুদ্ধ হয়েছি। তার এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’
জানা গেছে, ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন দল থেকে চারবার ফরিদপুর-১ আসনের এমপি নির্বাচিত হন শাহ মো. আবু জাফর। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। সে সময় তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ভিপিও নির্বাচিত হন (১৯৭০-৭১)।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ফরিদপুরের মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দ আওয়ামী লীগের টিকিটে ফরিদপুর-৪ (বর্তমানে ফরিদপুর-১) আসন থেকে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে প্রয়াত
আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশালে যোগ দেন। তিনি ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ-বাকশাল জোট থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে তৃতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন।৯০-পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টিতে ভাঙন দেখা দিলে এরশাদকে ছেড়ে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন শাহ মো. আবু জাফর। পরে ২০০৩ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। এরপর কাজী সিরাজুল ইসলাম পদত্যাগ করলে তার শূন্য আসনে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসন থেকে বিএনপিদলীয় এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ আবু জাফর কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য হয়ে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
এ বিষয়ে শাহ আবু জাফর বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নির্বাচন করতেই বিএনপি ছেড়ে বিএনএমে যোগ দিয়েছি।’ পাঁচ-ছয় দিনের সিদ্ধান্তে দলটিতে যোগ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
ফরিদপুর-১ আসনের জনসাধারণকে কোনো অরাজনৈতিক মানুষের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না মন্তব্য করে শাহ জাফর বলেন, ‘আমি আমার এলাকার মানুষের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তা ছাড়া আমি সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করেছি। শেষ বয়সে এটাই আমার শেষ নির্বাচন। আশা করি ফরিদপুর-১ আসনের মানুষ আমাকে ভালোবেসে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।’