প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দায়িত্ব নিতে চাইছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মাধ্যমে বই ছাপানোর বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও একমত। তবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বই ছাপার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অধিদপ্তরের মাধ্যমে বই ছাপার বিষয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টির শঙ্কা করছে। তাদের মতে, পাঠ্যবই ছাপার দায়িত্ব অধিদপ্তরের হাতে গেলে তা প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এনসিটিবির জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নানা জটিলতা এড়াতে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে আইন করে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হয় পাঠ্যবই ছাপানো প্রক্রিয়া। বই ছাপানোর দায়িত্ব অধিদপ্তরের হাতে গেলে সেসব জটিলতা নতুন করে সামনে আসবে। এনসিটিবি কারিকুলাম প্রস্তুত করা, বই লেখা ও ছাপানোর কাজ করছে। বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ আছেন। কিন্তু প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো অধিদপ্তরের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ পদ নেই।
তিনি আরো বলেন, বই ছাপানোই মূল কাজ নয়। ছাপানোর পর বিশেষজ্ঞরা সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখেন সব ঠিকঠাক আছে কি-না। এমনটি হলে এনসিটিবির প্রাথমিক শিক্ষাক্রম শাখাকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধিগ্রহণ করতে হতে পারে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বই ছাপানোর দায়িত্ব পেলে বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে এনসিটিবি। বইয়ের রয়্যালটির টাকায় চলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। অধিদপ্তর নিজেদের ছাপানো বইয়ের রয়্যালটি দাবি করলে এনসিটিবির একটি অংশকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে হবে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এনসিটিবি সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া হয় নিজেদের আয় থেকে। রয়্যালটি বাবদ পাওয়া টাকায় হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন। তারা বই ছাপানো শুরু করলেও রয়্যালটির টাকা নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে এনসিটিবির প্রাথমিক শিক্ষাক্রম শাখার কার্যক্রম কিভাবে চলবে সে বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আসলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক আলাদাভাবে চিন্তা করা হলেও শিক্ষাতো শিক্ষাই। এটি এক ছাতার নিচেই থাকা উচিত। এর মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় সামঞ্জস্যতা থাকবে।
জানা গেছে, অধিদপ্তরের মাধ্যমে বই ছাপানোর জন্য এনসিটিবির আইনে সংশোধন আনতে হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকের বই ছাপানো ও বিতরণের কাজ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত ছিলো। এ জন্য সংশ্লিষ্ট আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও চূড়ান্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু তা এখনো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হচ্ছে না। চলতি মাসেই বিষয়টি নিয়ে বসবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তবে এখনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।