নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান পাঠ্যবই ‘রাবিশ’ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করে শাস্তির মুখে পড়ছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত এক কর্মকর্তা। শিক্ষা ক্যাডারের ৩৬তম ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া ওই কর্মকর্তার নাম ছাকিনা ইয়াছমিন। তিনি বর্তমানে রাজধানীর বদরুন্নেছা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মরত আছেন। ফিজিক্স বইকে রাবিশ বলায় সরকারি কলেজের এ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে তাকে শোকজ করা হয়েছে।
অধিদপ্তর বলছে, পাঠ্যবইয়ের সমালোচনা করে ওই কর্মকর্তা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারের নির্দেশিকা ও অধিদপ্তরের নির্দেশনা পরিপন্থি কাজ করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক ছাকিনার দাবি, সমালোচনা নয়, নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে টপিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের সহকর্মীদের উদ্দেশে বইটি পরিমার্জনের পরামর্শ দিয়ে ওই পোস্টটি করেছিলেন। কারো ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ’ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলেও ধারণা তার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের একটি ফেসবুক গ্রুপে নবম দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পাঠ্যবইয়ের সমালোচনা করেন সরকারি কলেজের শিক্ষক ছাকিনা ইয়াছমিন। ব্যবস্থাপনা বিষয়ের এ শিক্ষক ওই পোস্টে লিখেছিলেন, ‘৯ম-১০ম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের মতো রাবিশ বই (টপিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই) আমি আমার জীবনে কম দেখেছি।
ওই পোস্টটি আমলে নিয়ে তাকে শোকজ করেছে অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের কলেজ শাখার উপপরিচালক অধ্যাপক মো. ওয়াহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত শোকজ নোটিশে বলা হয়েছে, ছাকিনা ইয়াছমিন ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক ও সরকারি কর্মকর্তা হয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের সমালোচনা করা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা এবং কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে বিষয়ে অনৈতিক ও উসকানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকতে দেয়া অধিদপ্তরের নির্দেশনা পরিপন্থি। তাই তার বিরুদ্ধে কেনো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে শোকজ নোটিশে। গত সোমবার শিক্ষিকা ছাকিনা ইয়াছমিনকে পাঠানো অধিদপ্তরের শোকজ নোটিশের কপি দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে আছে।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ছাকিনা ইয়াছমিনের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে যোগাযোগ কর হয়। প্রথমে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও পরে তিনি বলেন, আমার পরিবারের এক সদস্য রাজধানীর একটি স্বনামধন্য স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পাস করতে পারছে না। তার পদার্থবিজ্ঞান বই গেটে দেখলাম টপিকের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তাই এনসিটিবিতে কর্মরত সহকর্মীদের বইটি পরিমার্জনের ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে ফেসবুকের একটি ক্লোজ গ্রুপে ওই মন্তব্য লিখেছিলাম। সরকার বা কর্তৃপক্ষের সমালোচনার উদ্দেশে ওই কথা লেখা হয়নি। আমি শোকজ পেয়েছি, বৃহস্পতিবার জাবাব দেবো।
এক প্রশ্নের জবাবে পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের সমালোচনা নিয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ওই শিক্ষক বলেন, আমরা বিসিএস পরীক্ষার আগে আমরা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিয়েছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অধিদপ্তরে কর্মরত ছিলাম। কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকতে পারে। এ পর্যায়ে সরকারের একজন মন্ত্রীকে নিজের চাচা পরিচয় দিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন না লেখার অনুরোধ জানান এ শিক্ষিকা।
ছাকিনা ইয়াছমিন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে আগস্ট মাসে ৩৬তম ব্যাচে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পান। তাকে প্রথম পদায়ন দেয়া হয়েছিলো নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি কলেজে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে তাকে ওই কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পরে তাকে ওএসডি করে রাজধানীর বদরুন্নেছা সরকারি কলেজে সংযুক্ত করা হয়েছিলো। তার নিজ জেলা নরসিংদী বলে জানা গেছে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।