জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাওলা। আড়াই বছরের বেশি সময় আগে হবিগঞ্জে যোগদানের পর থেকেই অফিসের রেস্টরুমকে ব্যবহার করছেন বাসভবনের মতো। পঞ্চম গ্রেডের এই কর্মকর্তা প্রতি মাসে সরকারি তহবিল থেকে বাসা ভাড়া পাচ্ছেন ২৪ হাজার ৪৪৭ টাকা। গত ৩০ মাসে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪১০ টাকা বাসা ভাড়া পেলেও থাকছেন নিজ দপ্তরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্টরুমে। যদিও রেস্টরুমটির ভাড়া হিসেবে একটি টাকাও জমা দেননি সরকারি কোষাগারে। অবশ্য গোলাম মাওলার দাবি, রেস্টরুমটির ভাড়া হিসেবে রোজ ১০০ টাকা করে সরকারি চালানে জমা দিচ্ছেন। কিন্তু তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। বুধবার (৩০ অক্টোবর) দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শোয়েব চৌধুরী।
প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, শুধু এই একটি অনিয়মই নয়, বদলি, পদায়ন ও তদন্তের নামে নানা কায়দায় শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া রয়েছে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হবিগঞ্জের একজন সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস), কয়েকজন শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে ‘দুর্নীতির বটবৃক্ষে’ পরিণত হয়েছেন গোলাম মাওলা। সরকার পরিবর্তন হলেও তার অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। অবৈধ উপার্জনে ঢাকার নবীনগরে দোতলাবাড়ি ও গাড়ির মালিক হয়েছেন এ শিক্ষা কর্মকর্তা। দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই তার দপ্তরের প্রধান অফিস সহকারী নজরুল ইসলামও। তারও ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় জমি রয়েছে।
গোলাম মাওলা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদে হবিগঞ্জে যোগ দেন ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল। জেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, যোগদানের পর থেকেই নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষকদের বদলি, সংযুক্তি ও প্রতিস্থাপন ‘বাণিজ্য’ শুরু করেন গোলাম মাওলা। জেলা বা থানা সদর থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ও অবস্থান অনুযায়ী বদলিতে শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা করে ঘুষ নেন।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশে শিক্ষকদের ডেপুটেশন (সংযুক্তি) আদেশ বাতিল করে। কিন্তু গোলাম মাওলা ওই আদেশের তোয়াক্কা না করে নিজেই এক অফিস আদেশে ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে কাজে সহায়তার নামে ডেপুটেশনে তার দপ্তরে নিয়ে আসেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই ওই শিক্ষিকার সঙ্গে গোলাম মাওলার সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়। এ নিয়ে স্থানীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ওই শিক্ষিকাকে ফের স্কুলে বদলি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে অনলাইনে শিক্ষক বদলি প্রক্রিয়া শুরু হয়। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা চালু থাকে। বদলি চূড়ান্ত হওয়ার পরও আদেশ জারির শেষ দিনে নির্বাচিত শিক্ষকদের অফিসে ডেকে আনেন গোলাম মাওলা। ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি তুলে ধরে আবেদন বাতিল হওয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ আদায় করেন তিনি।inside-ad-1]
শিক্ষক চয়ন চৌধুরী বলেন, ‘গত বছরের মার্চে সহকারী শিক্ষিকা সুনীতি বালা দাস, মনিকা রায়, পলি রানী মোদক, কাজী আফরোজা বেগম ও সমাপ্তি রায় অনলাইনে বদলির আবেদন করেন। শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাওলার দাবি করা অর্থ দিতে না পারায় সেশন শেষ হয়ে গেছে অজুহাতে তাদের আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়।’
শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাওলার আরও অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে চয়ন চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর ২৩ জানুয়ারি পিংকি চক্রবর্তী নামে এক শিক্ষিকাকে চুনারুঘাট উপজেলার দুর্গম এলাকা লালচান্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করেন। ওই শিক্ষিকা সেখানে যোগদানে রাজি না হওয়ায় পরে এক লাখ টাকার বিনিময়ে ওইদিনই আরেকটি আদেশে তাকে একই উপজেলার আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে পদায়ন করা হয়। একই দিন ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে শিক্ষিকা নূপুর চৌধুরীকে বানিয়াচং উপজেলার মকা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মথুরাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করেন।’
শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ ও ’২৩ সালে হবিগঞ্জে মোট ৫৩১ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। পদশূন্য না থাকা সত্ত্বেও নতুন নিয়োগ পাওয়া অনেক শিক্ষককে টাকার বিনিময়ে তাদের পছন্দের স্কুল বানিয়াচংয়ের বনমথুরা, রাজানগর, দুলালপুর, মন্দরী ও ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষক জানান, প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলি হওয়া সহকারী শিক্ষকদের রিলিজ দেওয়ার দায়িত্ব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (টিইও)। কিন্তু গোলাম মাওলার মৌখিক নির্দেশে টিইওরা বদলি হওয়া শিক্ষকদের সরাসরি রিলিজ না দিয়ে তার অফিসে পাঠান। হবিগঞ্জ সদর, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার যেসব বিদ্যালয়ে প্রতিস্থাপক হিসেবে যত শিক্ষক বদলির আদেশ হয়েছে, তাদের সবার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়েছেন গোলাম মাওলা।
ঘুষ না দেওয়ায় হয়রানি : ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলেন, বেকায়দায় ফেলে টাকা আদায় করা গোলাম মাওলার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। টাকা দিলেই সব দোষ নির্দোষ হয়ে যায় এক লহমায়। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মজলিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষিকা (চঃদাঃ) প্রমিলা দাস অসুস্থজনিত কারণে ছুটিতে ছিলেন। প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বে ছিলেন হাবিবা আক্তার। গত ১৯ মার্চ ওই স্কুলটি বন্ধ পেয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হাবিবা আক্তারের বদলে প্রমিলাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। ২৯ মে বিভাগীয় মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। ১৪ আগস্ট যার তদন্তের দায়িত্ব পান সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোকূল চন্দ্র দেবনাথ। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই ৬ আগস্ট এক অফিস আদেশে প্রমিলার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ তুলে নেন গোলাম মাওলা। জানা গেছে, ১৬ হাজার টাকার বিনিময়ে সাময়িক বরখাস্ত থেকে রেহাই পান প্রমিলা। এ বিষয়ে গত ২ অক্টোবর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোকূল চন্দ্র দেবনাথ জানিয়েছিলেন, সেদিন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়নি।
২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল রেলওয়ের সহকারী স্টেশন মাস্টারের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে ১২ এপ্রিল শিক্ষকতায় যোগ দেন সুজিত চৌধুরী। তিনি আজমিরীগঞ্জের বদলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। কোনো কারণ ছাড়াই ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে সুজিতের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। তৎকালীন টিইও মাহমুদুল হকের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, সুজিত রেলওয়ে থেকেও বেতন নিচ্ছেন। পরে রেলওয়ে থেকে পদত্যাগপত্র ও বেতন গ্রহণ না করার সব কাগজপত্র ফের প্রদান করার পরও টিইও ২০ মাসেও এর সমাধান করেননি। পরে সুজিত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাওলার শরণাপন্ন হন। সুজিত বলেন, “২০ মাস বেতন না পাওয়ায় আমার দুর্দশার বিষয়টি তুলে ধরি। স্যার (গোলাম মাওলা) সব শুনে বলেন ‘তোমার বেতন ছাড়ে সাহায্য করলে আমার কী লাভ?’ একপর্যায়ে সমস্যার সমাধানের জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু টাকা না দিয়ে আমি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হই। হাইকোর্টের নির্দেশে গত বছর মে মাস থেকে পুনরায় আমার বেতন চালু হয়।”
আদালতে শরণাপন্ন হওয়ায় গোলাম মাওলা ক্ষুব্ধ হন জানিয়ে সুজিত বলেন, ‘আমাকে হাইকোর্ট দেখাইছ বলে হুমকি দেন স্যার। এরপর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হেলেনা রানী চৌধুরীকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এবং আমাকে অবগত না করে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে কথিত তদন্ত করিয়েছেন। আমাকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না মর্মে চিঠি দিয়ে হয়রানি করছেন। পরে গত ২৩ জানুয়ারি তথ্য অধিকার আইনে প্রধান শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন এবং আমার কাছে পাঠানো টিইওর তদন্ত নোটিস গ্রহণের ফটোকপি চেয়ে আবেদন করি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ১ ফেব্রুয়ারি চিঠিতে জানান, তদন্তনাধীন হওয়ায় এ বিষয়ে তথ্য প্রদান করা যাচ্ছে না।’
সুজিতের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা হেলেনা রানী চৌধুরী বলেন, ‘কী অভিযোগ করেছিলাম মনে নেই।’
সুজিতের তদন্ত কবে শেষ হবে জানতে চাইলে গোলাম মাওলা বলেন, ‘এটা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।’
নবীগঞ্জের বাউসা ইউনিয়নের নিজগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাছুম মিয়া চৌধুরী ছিলেন কায়স্থগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শেফালী আক্তার বেগমের অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জেরে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের লাখাইয়ের প্রত্যন্ত এলাকা কাঠাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয় মাছুমকে। পরে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো কিনারা করতে না পেরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাওলাকে ৫০ হাজার ও তার দপ্তরের কেরানি সুবল দাসকে ৮ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাস পর নবীগঞ্জের কৈখাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন মাছুম। নবীগঞ্জ শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানায়, মাছুম মিয়া যাতে আর কখনো প্রতিবাদ করতে না পারেন, এজন্য প্রধান শিক্ষিকাকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে ক্লাস ফাঁকিসহ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ নবীগঞ্জের তৎকালীন টিইও কাজী সাইফুলের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে তাকে কেন চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না মর্মে গত ২৯ জুলাই জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সই করা একটি চিঠি মাছুমের কাছে পাঠানো হয়। এর আগে টিইও কোথায়, কখন তদন্ত করবেন এসব বিষয়ে শিক্ষক মাছুমকে জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাছুম বলেন, ‘ভাই, সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপ করে আর বিপদ আনতে চাই না।’
গোলাম মাওলার দুর্নীতির সহযোগী যারা : কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৩ বছর ধরে একই দপ্তরে কর্মরত জেলা শিক্ষা অফিসের ক্লার্ক নজরুল ইসলাম, সুবল দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি আবু জাহিরের পিএস সুদীপ দাস (বর্তমানে পলাতক), হলদারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ কুমার দাস, আটঘরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, গুনিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুভাষ আচার্য, লাখাইর টিইও মাহমুদুল হক, হবিগঞ্জ সদরের টিইও আফতাব উদ্দিন ও আজমিরীগঞ্জের এটিইও হাসিবুল ইসলামকে নিয়ে গোলাম মাওলা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। মূলত এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি সাধারণ শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। সিন্ডিকেটের সদস্য উল্লিখিত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা তুলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেন আর কিছু রাখেন নিজেদের পকেটে।
তবে শিক্ষক অরুন দাস নিজেকে শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দাবি করে বলেন, ‘শিক্ষকদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলতে জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে যেতে হয়। অনেকে বিষয়টি নিয়ে ঈর্ষান্বিত হয়ে অপবাদ ছড়ায়।’
আরেক শিক্ষক সুভাষ আচার্যও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষকতার পাশাপাশি আমি একজন শিল্পী। ডিপিইও স্যার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকেন। এ ছাড়া আমি তার অফিসে কোনো কাজে যাই না।’
অর্থ আত্মসাতের যত অভিযোগ : গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষার মানোন্নয়ন, আইবাসসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার জন্য প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। এসব প্রশিক্ষণে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা অংশ নেন। তবে মাধবপুর উপজেলার ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর খায়ের উদ্দিন মোল্লাসহ কয়েকজন ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর ও প্রশিক্ষাণার্থী অভিযোগ করেছেন, পরে দেওয়া হবে জানিয়ে অধিকাংশ প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীকে ভাতা না দিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাওলা তা আত্মসাৎ করেছেন।
এ ছাড়া বিজয় দিবস ও শোক দিবস পালনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে সরকারি বরাদ্দ পেলেও গোলাম মাওলা এক টাকাও খরচ না করে পুরোটা পকেটে ঢুকিয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অফিসে দিবসগুলো পালন না করা সম্পর্কে গোলাম মাওলা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসব দিবসে আমরা অংশগ্রহণ করি। তাই আলাদাভাবে আমাদের অফিসে কিছু করি না।’ মিনা মেলার নামে স্টল বরাদ্দে নয়ছয় এবং অফিস মেনটেইন্যান্স বাবদ বছরে বরাদ্দ অর্ধ লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গোলাম মাওলা হবিগঞ্জে যোগদানের আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছেন। অধিদপ্তরে রয়েছে তার অনেক পুরনো সহকর্মী। এ ছাড়া ২০১০-১৬ সাল পর্যন্ত কিশোরগঞ্জে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে থাকার সুবাদে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে তিনি দম্ভ দেখাতেন। ফলে অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মচারী ভয়ে কোনো কথা বলতেন না।
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম মাওলা বলেন, ‘শিক্ষকদের বদলি এখন অনলাইনের মাধ্যমে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমার করণীয় কিছু নেই। বদলিতে যেসব বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে এর অধিকাংশই অধিদপ্তরের পাঠানো আদেশের কারণে। আর শিক্ষক হয়রানি ও সিন্ডিকেট সম্পর্কে যে অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা।’
আজমিরীগঞ্জ থেকে শিক্ষিকাকে তার অফিসে সংযুক্তি করার প্রসঙ্গে বলেন, ‘তাকে কাজে সহযোগিতার জন্য আনা হয়েছিল।’ এ ছাড়া সরকারি কোনো অর্থ আত্মসাৎ করেননি বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শিক্ষকদের হয়রানি ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’