পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে পদ্মায় ঝাঁপ দিয়ে তরুণীর আত্মহ*ত্যা

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজবাড়ী |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজবাড়ী: কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন পিউ কর্মকার (১৮) নামের এক তরুণী। 

গতকাল মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল রাজবাড়ীর সোনাকান্দর ঘাট এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেয়।

কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, রাজবাড়ী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বিনোদপুর গ্রামের দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় পিউ কর্মকারের বাড়ি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে পিউ ছিলেন মেজো। তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু প্রত্যাশামতো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন। 

তার লেখা সুইসাইড নোটে এমনটিই লেখা রয়েছে। 

পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে পিউ কর্মকার তার ফেসবুকে লিখেছেন, গুচ্ছ আমার শেষ ভরসা ছিল। জানি না কবে রেজাল্ট দেবে। পরীক্ষাও মোটামুটি হয়েছিল, একটা আশা ছিল কিন্তু আমার ভাগ্য সেই আশাটাও পূরণ করতে দিল না। ৫টা অপশন থাকে তার মধ্যে আমি বায়োলজি আর ইংরেজি এর বৃত্ত ভরাট করে ফেলেছিলাম ভুল করে। আজকে সেটা দেখলাম। কিন্তু আমি উত্তর করেছিলাম বাংলার। আমার সব স্বপ্ন শেষ। একে একে ঢাবি, রাবি, জাবি থেকে একটু একটুর জন্য ধাক্কা খাই। জানি এটাও আমার ভাগ্যের জন্য, চেষ্টা আমার কম ছিল না। সারা দিন-রাত এক করে পড়তাম। বাবা-মার অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে। কিন্তু আমি কিচ্ছু দিতে পারি নাই। দাদার ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে। আমারও স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই, ডাক্তার হব। আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিল যে, যখন মেডিকেল অ্যাডমিশনের প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করি কিন্তু মেডিকেলেও বসতে পারি না। এটা থেকেও বিশাল একটা ধাক্কা খাই। অনেক ভেঙে পড়েছিলাম তাও হাল ছাড়ি নাই। এই অ্যাডমিশন পিরিয়ডটা যে কতটা কষ্ট দিয়েছে আমাকে।

তিনি আরও লিখেন, এই সব আর আমি নিতে পারছি না। আমি শুধু একটা আশ্রয় খুঁজছিলাম, শেষ আশ্রয় এটাও শেষ হইল। অনেক মানুষ অনেক আত্মীয়ের অনেক কথা শোনা লাগছে। বাবার একটু ফিনানসিয়াল সমস্যা ছিল এ জন্য ঢাকা গিয়ে পড়তে হবে কেন। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম যে পারব। কিন্তু আমি আর পারলাম না। সারাটা দিন ঘরের মধ্যে একা একা বসে থাকি। মানুষের কত ফ্রেন্ড কত কিছু কিন্তু আমি আমার পাশে কাউকে পাই নাই। সব থেকে প্রয়োজন ছিল যাকে, যাকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম তাকেও আমি আমার পাশে পাই নাই। হয়ত আমাকে সাপোর্ট করার মতো কেউ থাকলে আজকে এই মৃত্যুটা আমার হতো না। সেকেন্ড টাইমের প্রিপারেশন নেওয়ারও আমার কোনো মানসিক বা শারীরিক শক্তি নাই। আমার জীবনটা এখানেই থেমে গেল।

সুইসাইড নোটে পিউ আরও লিখেছেন, মায়ের কাছে গিয়ে মাঝেমধ্যে কাঁদতাম, মাও বুঝে নাই আমাকে। আমি একটা বোঝা সবার কাছে। আমার মৃত্যুর জন্য আমার এই বড় বড় স্বপ্নগুলোই দায়ী। আমি আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নাই। আমাকে শেষবারের মতো দেখতে চাইলে নদীর জলেই খুঁজো। আমার মৃত্যুটা এভাবেও চাই নাই, ভালো থেকো সবাই। আমি আমার এই জীবনটা আর নিতে পারছি না। আমাকে মাফ করে দিও সবাই। এভাবে দম বন্ধ করে বাঁচতে পারছি না আর।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে - dainik shiksha একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের - dainik shiksha ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম - dainik shiksha থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান - dainik shiksha প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038280487060547