দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সিট সংখ্যা ৫০২টি। এর মধ্যে ৩৯৭টিই চলে গেছে হল প্রশাসনের বেদখলে। বিষয়টি হল প্রশাসনের জানা থাকলেও এ নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা ভাড়া হারাচ্ছেন হল প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দের সময় এককালীন টাকা আদায়ের প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। হল প্রশাসনের এমন নীরব ভূমিকাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনাবাসিক সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবাসিক হলের দুটি ব্লকে ৬৫টি করে মোট ১৩০টি রুম রয়েছে। যার মধ্যে ৬টি রুমে ১ জন করে এবং বাকি ১২৪টি রুমে ৪ জন করে মোট ৫০২ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। যেখানে ‘এ’ ব্লকের ২৬০টি সিটের মধ্যে ১৬৩টি এবং ‘বি’ ব্লকের ২৪২টি সিটের মধ্যে ১৫৮টি সিটে অবৈধভাবে থাকছে শিক্ষার্থীরা। তবে অবশিষ্ট বৈধ সিটের আরো ৭৬ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে অনেক আগেই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। হল প্রশাসন থেকে নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ না করার ফলে এই সিটগুলো কাগজে কলমে এখনও বৈধ দেখালেও মূলত সেখানে অবৈধভাবে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে এ সিটসহ দুই ব্লক মিলিয়ে মোট ৩৯৭টি সিট অবৈধ এবং মাত্র ১০৫টি সিট বৈধ।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ‘এ’ ব্লকের ৬৫টি রুমের মধ্যে ২৭টি এবং ‘বি’ ব্লকের ৬৫টি রুমের মধ্যে ৩৭টি রুমের সব সিটই অবৈধ। বাকি রুমগুলোর কোনোটিতে একজন অথবা দুজন বৈধ শিক্ষার্থী থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, সর্বশেষ ২০২২ খ্রীষ্টাব্দে হলে ওঠার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আমিসহ আমার ছয়জন বন্ধু হলে উঠার জন্য আবেদন করি এবং ভাইভাতে অংশগ্রহণ করি। এরপর হল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে হল প্রশাসন পরে জানানোর কথা বলে। কিন্তু পরে আমাদের সঙ্গে আরো যোগাযোগ করেননি।
হলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ১৩০টি রুমের মধ্যে তাবলিগ জামাতের ৮টি রুম ছাড়া, বাকি রুমগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রায় ৯ থেকে ১০টি গ্রুপ—উপগ্রুপের নেতারা। কোন রুমে কে উঠবে, কে নামবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা তারাই ঠিক করে দেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, হল প্রশাসনের অদক্ষতার কারণেই শিক্ষার্থীরা এখন হল প্রশাসনকে মূল্যায়ন করছেনা। শিক্ষার্থীদের অবৈধভাবে থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, এতগুলো সিট অবৈধ থাকা হল প্রশাসনের ব্যর্থতা। আমরা কখনোই আমাদের নেতাকর্মীদের বলি না হলে অবৈধভাবে থাকতে। হলের অবৈধভাবে থাকা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হল প্রশাসন অভিযান চালাক, আমরা সহযোগিতা করব।
হল প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, করোনার পর থেকে কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীকে হলের সিট দিতে পারেননি হল প্রশাসন। একাধিকবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলে ওঠার বিজ্ঞপ্তি দিলেও সেটা কার্যকর হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নতুন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম মিরু বলেন, এতগুলো সিট অবৈধ থাকা উদ্বেগের। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি মাত্র তিন মাস হয়েছে। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ডাইনিং চালু, খাবার পানি সংকট নিরসনসহ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। যেন শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত সুযোগ—সুবিধা পেয়ে হলের সিট বৈধ করতে উৎসাহ পায়। এ পর্যন্ত দুইবার অবৈধ সিটগুলো বৈধ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। হলের সিটগুলো বৈধ করার জন্য আমি সামনে অভিযান পরিচালনা করব।