কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেয়া হয়েছিলো সাবজেক্ট ম্যাপিং বা অটোপাসে। তারপর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষা নেয়া হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, বাছাই করা বিষয়ে। তাতে স্বভাবতই পাসের হার কমে যায়। সেবার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হন। পরের বছর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে গড় পাসের হার কমে হয় ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সিলেবাস ও পরীক্ষার বিষয় বাড়ানোয় চলতি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে পাসের হার নেমে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
একই সঙ্গে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমানে রেকর্ড ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও সিলেবাস ও পরীক্ষার বিষয় বাড়ানোয় এ বছর তা লাখের নিচে নেমে গেছে। এবার ৯২ হাজার ৫৯৫ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। তার মানে, গতবারের তুলনায় এবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি নেমে গেছে। জিপিএ-৫ কমেছে ৮৩ হাজার ৬৮৭টি।
ফলাফলের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবারও সেই পুরোনো বিষয়, ইংরেজির প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলের ওপর। ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের কয়েকটি বিষয়ের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার ইংরেজি বিষয়ে তুলনামূলকভাবে খারাপ ফল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে কোনো কোনো শিক্ষা বোর্ড ইংরেজিতে বেশি খারাপ করেছে। যেমন যশোর শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার ৭৭ শতাংশের কিছু বেশি। এই বোর্ডে এবার পাসের হারও সবচেয়ে কম। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৭৫ শতাংশের মতো। এই বোর্ডেও পাসের হার সার্বিক গড় পাসের হারের চেয়ে কম। অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডেও এই বিষয়ে তুলনামূলক ফল খারাপ হয়েছে। আর বাধ্যতামূলক এই বিষয়ে খারাপ ফল হওয়ায় সার্বিক ফলের ওপর প্রভাব পড়েছে।
তবে আগের বছরগুলোর সঙ্গে চলতি বছরের ফলে তুলনা করা ঠিক হবে না বলে মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গতকাল রোববার সকালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতবছরের ফলের সঙ্গে চলতি বছরের ফলের তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপনের সময় তিনি বলেন, গতবছর ও চলতি বছরে এইচএসসি ও সমমানের ফল আসলে তুলনাযোগ্য নয়, কারণ গতবছর পরীক্ষা কম সংখ্যক সময়ে কম নম্বরে হয়েছে, আর এবার সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হলেও পরীক্ষা সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে হয়েছে।
এর আগে সকালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন শিক্ষা বোর্ডগুলো চেয়ারম্যানরা।
নয়টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। গতবছর নয়টি সাধারণ বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় ৮৪ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিলেন। এবার নয়টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ৭৮ হাজার ৫২১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গতবছর শুধু এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৫ জন শিক্ষার্থী।
এবার আলিম পরীক্ষায় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ৭ হাজার ৯৭ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এবার আলিমের ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গতবছর পাসের হার ছিলো ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গতবছর অর্থাৎ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে আলিমে ৯ হাজার ৪২৩ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। চলতি বছর মাদরাসা বোর্ড থেকে ৯৮ হাজার ৬৮৪ জন পরীক্ষার্থী আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিলেন। ২ হাজার ৬৮৮টি মাদরাসার এসব শিক্ষার্থী এবার ৪৪৯টি কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। আলিমে পাস করেছেন ৮৬ হাজার ৮৩২ জন শিক্ষার্থী।
সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ডগুলোর ফলে পাসের হারে সবার ওপরে বরিশাল বোর্ড। এ বোর্ডের ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এ বোর্ডের ৩ হাজার ৯৯৩ জন পরীক্ষা জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
পাসের হারের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা বোর্ড। এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ৭৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। ঢাকা বোর্ডের ৩১ হাজার ৭৫২ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
পাসের হারের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে রাজশাহী বোর্ড। এইচএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডের ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এ বোর্ডের ১১ হাজার ২৫৮ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা কুমিল্লা বোর্ডের ৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এবার কুমিল্লা বোর্ডের ৫ হাজার ৬৫৫ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
পঞ্চম অবস্থানে থাকা দিনাজপুর বোর্ডের ৭৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এ বোর্ডের ৬ হাজার ৪৫৯ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম বোর্ডের ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এ বোর্ডে ৬ হাজার ৩৩৯ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
সপ্তম অবস্থানে থাকা সিলেট বোর্ডের ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এ বোর্ডের ১ হাজার ৬৯৯ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
অষ্টম অবস্থানে থাকা ময়মনসিংহ বোর্ডের ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এ বোর্ডের ৩ হাজার ২৪৪ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
সর্বশেষ অবস্থানে থাকা যশোর বোর্ডের ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এ বোর্ডের ৮ হাজার ১২২ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।