বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাবি নীল দল ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি রোববার আলাদা আলাদা বিবৃতিতে এর প্রতিবাদ জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, সরকারি কলেজের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ইনক্রিমেন্ট বাতিলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেয়া সিদ্ধান্ত স্বপ্রণোদিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের ‘অপচেষ্টা’ করছে ইউজিসি। এ সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘সরকারবিরোধী অবস্থানকে’ চাঙা করতে ভূমিকা রাখবে।
রোববার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুল হক ভূইয়া। বিবৃতিতে শিক্ষকদের পিএইচডির ইনক্রিমেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য এত দিন ইনক্রিমেন্ট পেয়ে এসেছেন। ১৮ মে তা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের দোহাই দিয়ে ইউজিসি এক প্রজ্ঞাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘদিন ধরে পেয়ে আসা পিএইচডির ইনক্রিমেন্ট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ইউজিসির ওই প্রজ্ঞাপনেই উল্লেখ আছে যে অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি কলেজের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য ইনক্রিমেন্ট দেয়ার রীতি বাতিল করেছে। অথচ ইউজিসি স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের অপচেষ্টা করছে। শিক্ষক সমিতি মনে করে, ইনক্রিমেন্ট বন্ধের এ সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারবিরোধী অবস্থানকে চাঙা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এবং মেধাবীদের শিক্ষকতায় আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির জন্য ইনক্রিমেন্ট দেয়া শুরু হয়েছিল মেধাবীদের শিক্ষকতায় আসতে আগ্রহী করে তোলার জন্য৷ শিক্ষক সমিতি ইউজিসিকে এ ধরনের অপতৎপরতা পরিহার করে শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্তটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছে৷
শিক্ষকদের পিএইচডির ইনক্রিমেন্ট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন নীল দলও। সংগঠনের আহ্বায়ক মো. আবদুস ছামাদ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীল দল এ স্থগিতাদেশের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে৷ প্রকাশিত পরিপত্রটি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, বিষয়টি কলেজশিক্ষকদের
ইনক্রিমেন্ট দেওয়াসংক্রান্ত৷ অথচ ইউজিসি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট স্থগিত রাখার আদেশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালগুলোর রেজিস্ট্রার বরাবর পরিপত্র পাঠিয়েছে। পিএইচডির ইনক্রিমেন্ট স্থগিতের পদক্ষেপ বর্তমান সরকারের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে অর্জিত ‘বড় বড় কৃতিত্বকে ম্লান করে দিতে পারে’ বলে নীল দলের বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়। এতে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষাবান্ধব সরকার উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে৷ এ রকম সময়ে উচ্চশিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য প্রচলিত একটি প্রণোদনা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে৷ শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরিবর্তে উল্টো প্রত্যাহার করার ফলে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। নীল দল ইউজিসির ওই পরিপত্রটি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে৷ এ পদক্ষেপ শিক্ষকসমাজের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে সরকারবিরোধীদের হাতকেই শক্তিশালী করার অপচেষ্টা কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।এদিকে রোববার পাঠানো এক বিবৃতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও ইনক্রিমেন্ট স্থগিতে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা পিএইচডি ডিগ্রির জন্য তিনটি অগ্রিম ইনক্রিমেন্ট দেয়ার বিষয় প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছেন। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
এতে জবি শিক্ষক সমিতি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় হল গবেষণার তীর্থস্থান। জ্ঞান আহরণ, নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি ও বিতরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান কাজ। নিরন্তর গবেষণা নতুন উদ্ভাবনের দ্বার উন্মোচিত করে এবং পিএইচডি গবেষণা এ দ্বার উন্মোচনের কলাকৌশল শিক্ষণের প্রধানতম সোপান হিসেবে কাজ করে। আমরা মনে করি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ ও জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনে দেশে একটি গবেষণা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং গবেষণা মনস্ক বিজ্ঞানী তৈরির জন্য এই প্রণোদনা দেয়া খুবই জরুরি ও অত্যাবশ্যক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপেক্ষা করে শুধুমাত্র সরকারি কলেজের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি হতাশাজনক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মান রক্ষায় বিষয়টি অদ্যাবদি সুরাহা না করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইনক্রিমেন্ট দেয়ার সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা সংক্রান্ত পত্র পাঠানোর বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে এবং একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য তিনটি অগ্রিম ইনক্রিমেন্ট দেয়ার বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির জোর দাবি জানাচ্ছে।