মিশরের পিরামিডের মাথায় মিলল রহস্যময় বুদবুদের খোঁজ। এই বুদবুদগুলি ব্যাহত করতে পারে উপগ্রহের সঙ্গে যোগাযোগও! তেমনটাই নাকি ধরা পড়েছে চীনের অত্যাধুনিক রাডারে।
গত ২৭ আগস্ট চীনা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মিশরীয় পিরামিড এবং মিডওয়ে দ্বীপপুঞ্জের মতো এলাকায় বুদবুদ শনাক্ত করেছেন তাঁরা।
চীনের ওই বিজ্ঞানীরা এ-ও জানিয়েছেন, রহস্যময় এই বুদবুদ আসলে প্লাজ়মা বুদবুদ। উপগ্রহ যোগাযোগ এবং জিপিএস পরিষেবায় প্রভাব ফেলতে পারে সেগুলি। এর আগে এত বড় প্লাজ়মা বুদবুদ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করা হয়েছে।
‘চায়না অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এর অধীনে ‘জিয়োলজি এবং জিয়োফিজিক্স ইনস্টিটিউট’-এর তৈরি একটি নতুন রাডার ব্যবস্থা ‘এলএআরআইডি’ ব্যবহার করে প্লাজ়মা বুদবুদগুলি শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
নভেম্বরে একটি সৌরঝড়ের কারণে বুদুবুদগুলি উত্তর আফ্রিকা থেকে মধ্য প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে বলেও দাবি করেছেন চীনের ওই বিজ্ঞানীরা।
আধুনিক প্রযুক্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি বলে বিবেচিত প্লাজ়মা বুদবুদ। প্লাজ়মা বুদবুদ আয়নোস্ফিয়ারের উপরে থাকে, যা আয়নোস্ফিয়ারের উপরের বায়ুমণ্ডলে থাকা চার্জযুক্ত কণাগুলির সঙ্গে মিলে উপগ্রহ যোগাযোগ এবং জিপিএস পরিষেবাকে প্রভাবিত করে।
এই প্লাজ়মা বুদবুদগুলি মূলত সৌরঝড়ের পরে তৈরি হয়। আধুনিক যোগাযোগ এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রক্ষার্থে এই বুদবুদ শনাক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে করা হচ্ছে চীনা রাডারে যে বুদবুদ ধরা পড়েছে তা গত বছরের নভেম্বরে হওয়া সৌরঝড়ের ফলে সৃষ্ট।
বিজ্ঞানীরা এ-ও জানিয়েছেন, এর আগে এত বড় প্লাজ়মা বুদবুদ পৃথিবীতে দেখতে পাওয়া যায়নি। যা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
বিজ্ঞানীরা উত্তর আফ্রিকা থেকে মধ্য প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বুদবুদগুলিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন, যা শনাক্ত করা হয়েছে ‘এলএআরআইডি’ রাডারের মাধ্যমে।
‘এলএআরআইডি’ রাডারের সাহায্য প্লাজ়মা বুদবুদগুলির গতিবিধি এবং গঠন আগের থেকে আরও ভাল ভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
উল্লেখ্য, চীনের হাইনান দ্বীপে থাকা ‘এলএআরআইডি’ (লারিড) রাডারের পরিধি ৯,৬০০ কিলোমিটার। যা হাওয়াই থেকে লিবিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলগুলি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।
এটি উচ্চ শক্তির তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ নির্গত করে, যা আয়নোস্ফিয়ার এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠের মধ্যে ধাক্কা খায় এবং বিভিন্ন জিনিস শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এই রাডারে ৪৮টি ট্রান্সসিভার অ্যান্টেনাও রয়েছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগে লারিড রাডারের পরিধি ছিল মাত্র তিন হাজার কিলোমিটার। কিন্তু নতুন সিগন্যাল কোডিং এবং জিয়োফিজ়িক্যাল সিমুলেশন মডেলের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাডারটিকে অত্যাধুনিক বানানো হয়েছে।
যদিও চীনের বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন, বিশ্বব্যাপী প্লাজ়মা বুদবুদগুলির শনাক্তকরণ এবং পর্যবেক্ষণের জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন।
গবেষকেরা বিশ্বব্যাপী নিম্ন-অক্ষাংশ অঞ্চলে, বিশেষ করে সমুদ্রের উপরে লারিডের অনুরূপ তিন থেকে চারটি অতিরিক্ত রাডার তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিজ্ঞানীদের যুক্তি, এই ধরনের উন্নত রাডার প্লাজ়মা বুদবুদ চিহ্নিত করে, যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় এর প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।
বৈজ্ঞানিক প্রয়োগের বাইরে সামরিক ক্ষেত্রেও লারিডের অনুরূপ রাডার ব্যবহার করা হয়। চীনের সামরিক বাহিনী লারিডের মতো ‘ওভার দ্য হরাইজ়ন’ রাডার ব্যবহার করে, যা যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্রকে নিপুণ ভাবে শনাক্ত করতে পারে। সূত্র: আনন্দবাজার