পুলিশের ছদ্মবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রীদের টার্গেট করতেন ছিনতাইকারী শাকিল আহম্মেদ রুবেল। এরপর নিজের মোটরসাইকেলে তুলে নিতেন। নির্জন কোনো স্থানে নিয়ে সবকিছু কেড়ে নিতেন, নারী ভিকটিমদের করতেন শ্লীলতাহানিও।
ছিনতাইকারী শাকিল আহম্মেদ রুবেলের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের সামনে পুলিশের স্টিকার, হাতে ওয়াকিটকি, কোমরে পিস্তল ও চালচলনে পুলিশ মনে হওয়ায় ভিকটিমরাও তার ফাঁদে পড়তেন। তিনি অভিনব পন্থায় অন্তত দেড় হাজার ছিনতাই ও ১৫০ জনের বেশি নারীর শ্লীলতাহানি করেছেন। যার বেশিরভাগের শিকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের নারী শিক্ষার্থীরা।
রোববার গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ চার জনকে গ্রেফতারের পর এ কথা জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. শাকিল আহম্মেদ রুবেল (২৮), মো. আকাশ শেখ (২২), দেলোয়ার হোসেন (৫৫) ও মো. হাবিবুর রহমান।
গতকাল শনিবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি উত্তরা বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, একটি ওয়ারলেস সেট, দুইটি পুলিশ স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল ও ছয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ বলেন, ঢাবি শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের আগে গত ১২ আগস্ট উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করে রুবেল। সেই মোটরসাইকেলে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দিয়াবাড়ীতে নিয়ে ছিনতাই করে।
রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, রুবেলের বাড়ি গাজীপুর, তবে আরও দুটি ঠিকানা পাওয়া গেছে। সেগুলো আমরা যাচাই করছি। রুবেল ঢাকায় কোনো বাসা ভাড়া নেয়নি। সে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতো। তারপর মোটরসাইকেল ছিনতাই কিংবা ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এসব ঘটনা ঘটাতো।
তিনি বলেন, রুবলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে এখন পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে দেড় হাজারের বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। ছিনতাইয়ের পর মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করতো। কারণ হিসেবে সে বলে, তারা যেন লোকলজ্জার ভয়ে কোনো কথা না বলে।
ছিনতাইয়ের জন্য রুবেল নির্জন স্থান বেছে নিতো জানিয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মেয়েদের মোটরসাইকেলে উঠিয়ে রাজধানীর ৩০০ ফিট, দিয়াবাড়ী ও পূর্বাচল এলাকায় নিয়ে যেতো। তার নামে ছিনতাইয়ের ছয়টি মামলা রয়েছে। সে একাধিকবার জেলেও গিয়েছে। তাকে এবং তার সহযোগীদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনুরোধ করবো কেউ পুলিশ পরিচয় দিলে যেন তার মোটরসাইকেলে কেউ উঠে না যায়। তাকে যেন চ্যালেঞ্জ করে এবং তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কোনো পুলিশ মোটরসাইকেল করে কখনো আসামি নিয়ে যায় না। তাহলে রুবেলের মতো মানুষকে আটকানো যাবে।
ঢাবির এক শিক্ষার্থী কীভাবে এতো সহজে রুবেলের খপ্পরে পয়ে যায় জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, আসলে তার হাতে ওয়াকিটকি, পিস্তল ও গাড়িতে পুলিশের স্টিকার দেখে হয়তো ওই শিক্ষার্থী তাকে পুলিশ ভেবে নেয়। তবে সে যদি আশপাশের লোকজনকে ডেকে তাকে চ্যালেঞ্জ করতো তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।