কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন্সের এক পুলিশ কর্মকর্তা ও এক পুলিশ সদস্যকে ‘বোকা বানিয়ে’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার সিএন্ডবি মোড়ের সততা স্টোর নামে দোকানে এ ঘটনা ঘটে।
বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে সততা স্টোরে শামীম নামে এক পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) গিয়ে দোকানদার স্বপনকে কয়েকটি নাম্বারে দুই লক্ষাধিক টাকা পাঠানোর কথা বলেন। এ সময় স্বপন বিষয়টি যাচাই করতে বললে পুলিশ সদস্য শামীম তার নিজের ফোনে পুলিশ সুপারের দেহরক্ষী পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যাক্তি স্বপনকে পুলিশ সদস্য শামীমের কথামতো টাকা পাঠাতে বলেন। পুলিশ সুপারের দেহরক্ষী টাকা নিয়ে দোকানে পৌঁছাচ্ছেন বলে অপর প্রান্ত থেকে দাবি করা হয়। এসময় পুলিশ সদস্য শামীম দোকানের ভেতরে গিয়ে বসেন। এ সময় এজেন্ট স্বপন মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির অফিস থেকে টাকা নিয়ে শামীমের দেয়া একাধিক মোবাইল নম্বরে মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পাঠান। কিন্তু শামীমের কথামতো এসপির দেহরক্ষী টাকা নিয়ে আসেননি। পরে স্বপন বিষয়টি কুড়িগ্রাম সদর থানাকে জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারে।
সিএন্ডবি মোড় এলাকার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ীরা জানান, সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর পুলিশ সদস্য শামীম জানান, তাকে মূলত পুলিশ লাইন্স থেকে রিজার্ভ ইন্সপেক্টর (আরআই) নুর মোহাম্মদ বাসস্ট্যান্ডে পাঠিয়েছেন। এসপির কিছু মালামাল আসবে জানিয়ে তাকে তা আনতে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর এসপির দেহরক্ষী পরিচয় দিয়ে তাকে ফোন করে কয়েকটি নাম্বার দিয়ে তাতে টাকা পাঠাতে বলা হয়। এরপর তিনি টাকা পাঠান।
পরে পুলিশ এজেন্ট স্বপন ও পুলিশ সদস্য শামীমকে পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায়। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু জানায়নি জেলা পুলিশ।
পুলিশ লাইন্সের আরআই নুর মোহাম্মদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে একটি নম্বর থেকে আমাকে ফোন দিয়ে এসপি স্যারের দেহরক্ষীর পরিচয় দেয়া হয়। স্যারের কিছু মালামাল আসবে জানিয়ে একজন পোশাক পরিহিত কনসটেবলকে বাসস্ট্যান্ডে পাঠাতে বলা হয়। আমি তখন একজন কনসটেবলকে পাঠাই। কিন্তু আমি জানতাম না এটা প্রতারকদের কাজ। ওই পুলিশ সদস্য বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে প্রতারক চক্রটি তাকে এসপি স্যারের দেহরক্ষী পরিচয় দিয়ে কয়েকটি নম্বরে টাকা পাঠাতে বলে। স্যারের দেহরক্ষী পরিচয় দেয়া ব্যক্তি টাকা নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছে বলে তাকে জানায়। তখন সে সেটা বিশ্বাস করে টাকা পাঠায়।
ভুক্তভোগী এজেন্ট স্বপনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে স্বপনের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী তার বরাতে বলেন, জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বপনকে ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে তাকে আপাতত কারও সঙ্গে কথা না বলতে অনুরোধ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখছেন। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্য শামীম বাদি হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।