নতুন পে-স্কেল বা মহার্ঘ ভাতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস না পেলে আন্দোলনে নামবে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনগুলো। সরকারি কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। এদিকে নতুন পে-স্কেল বা মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা এ মুহূর্তে নেই- অর্থমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েক দিনে কর্মচারী সংগঠনগুলোর নেতারা একাধিক বৈঠক করেছেন।
সর্বশেষ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে বেতন কাঠামো ঘোষণা করেছিল সরকার। কর্মচারীদের প্রত্যাশা, প্রতি পাঁচ বছর পরপর নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হবে। অন্যথায় স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করে প্রতিবছর মূল্যস্ম্ফীতি অনুযায়ী কর্মচারীদের বেতন সমন্বয় করা। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, গত বেতন কমিশন গঠনের পর এমন একটি উদ্যোগের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কার্যকর করা হয়নি। কর্মচারী সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় নিম্ন আয়ের সরকারি কর্মচারীরা খুবই হতাশ হয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবারের ব্যয়ভার বহনে সমস্যায় আছেন কর্মচারীরা। এ কারণে সংগঠনের কর্মী পর্যায় থেকে আন্দোলনে যাওয়ার চাপ রয়েছে। তবে আন্দোলনে যাওয়ার আগে সংগঠনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বার্তা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। ইতিবাচক কোনো বার্তা পেলে আন্দোলনের দিকে হাঁটবেন না তাঁরা।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পাব এমন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। ঠিক সেই মুহূর্তে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে সরকারি কর্মচারীরা খুবই হতাশ হয়েছেন। আমাদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী আমাদের হতাশ করবেন না। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি। কিন্তু সরকার বিব্রত হয় এমন ধরনের পদক্ষেপ নিইনি। এখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোনো আশ্বাস না পেলে আন্দোলনে নামার বিকল্প থাকবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কর্মচারী নেতারা বিভিন্ন সময়ে তাঁদের দাবি নিয়ে আমার কাছে এসেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমার পর্যায় থেকে বলার কিছু নেই। তিনি বলেন, এর আগে প্রধানমন্ত্রী শতভাগের ওপরে বেতন-ভাতা বাড়িয়েছেন। এখন দেশে একটি সংকটের সময় চলছে। তাই এই মুহূর্তে সবারই ধৈর্য ধরা প্রয়োজন বলে মনে করি।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি হেদায়েত হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা খারাপ সময় পার করছেন। সাত বছরের বেশি সময় হয়ে গেলেও নতুন পে-স্কেল বা অন্য কোনো সুবিধা না আসায় আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য সংগঠিত হয়েছিলাম। গত বছরের জুন মাসে ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের আশ্বাসে সেটা স্থগিত করা হয়েছে। আমরা সরকারের আশ্বাস অনুযায়ী সাধারণ সদস্যদের আশ্বস্ত করেছিলাম। তিনি বলেন, এখন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কারণে কর্মচারী সংগঠনগুলোর সাধারণ সদস্যদের কাছে আমরা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি। না হলে আন্দোলনে যাওয়ার চাপ বাড়বে।