সরকারি চাকরির বড় আশা অবসরের পর স্বচ্ছলভাবে পরিবারের সঙ্গে টেনশন মুক্ত জীবন অতিবাহিত করা। কিন্তু কেউ কেউ সময় পার করছেন অবহেলায়, হতাশায়, চোখের পানি ফেলে। মৃত্যুর আগের দিনগুলো কিভাবে বাঁচবেন সেই চিন্তায়। ভালো থাকার জন্য কেউ কেউ নানা কাজ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পড়ন্ত বেলায় সিনিয়র সিটিজেন নামক খেতাব নিয়ে অনেকে শারীরিক অসুস্থতা ও অক্ষমতায় কাজ করার শক্তি পাচ্ছেন না। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর মধ্যে যারা ভেবেছিলেন পেনশন সম্পন্ন করে এককালীন অর্থ দিয়ে বাকি জীবনের ও পরিবারের জন্য টেকসই কোনো ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারাই পড়েছেন বিপাকে।
গত কয়েক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। অনেকে অর্থ বিনিয়োগের পরিবর্তে বাধ্য হয়ে অসুখ-বিসুখে, ছেলে- মেয়ের বিয়ে, থাকার একটা ভাল ঘর তুলতে বা স্বজনদের দূর্দশায় খরচ করে বর্তমানে নিঃস্ব হয়ে বেঁচে আছেন। চিকিৎসা ভাতা ২৪৯০ টাকাই তাদের সম্বল। ২০১৭ এর জুলাই থেকে শতভাগ পেনশন সমর্পণের সুবিধা বিধান করার ফলে নতুন করে তাদের সংখ্যা বাড়ছে না। বরং মৃত্যুর ফলে কমে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবীণ পেনশনভোগীদের প্রতি আন্তরিকতার নিদর্শন স্বরূপ, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের ১৫ বছর পর পেনশন পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দেওয়ায় কিছু সংখ্যক পেনশনভোগীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
অথচ সরকারের এ মহতি উদ্যোগ অনেকটা শুভঙ্করের ফাঁকির মত। কারণ অবসর গ্রহণের পর ১৫ বছর খুব কম সংখ্যকই বেঁচে থাকেন। পেনশনের সুবিধা পেতে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের ৭৩ বা ৭৫ বছর বেঁচে থাকতে হবে। তাদের অধিকাংশের সুস্থ্, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি পুনঃপ্রবর্তিত পেনশন ১৫ বছরের স্থলে ১০ বছর করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। এছাড়াও পেনশন সমতাকরণ, চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি করার বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে দেনদরবার করে যাচ্ছে। সরকার নীতিগতভাবে এ মানবিক আবেদন মেনে নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
পেনশনের সুবিধা পেতে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীকে ৭৩ বা ৭৫ বছর বেঁচে থাকতে হবে। তার মানে অন্তত ২৫ ভাগ অবসরভোগী সুবিধা ভোগ করতে পারবেন কিনা তা বিবেচনায় না এনেই এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। পেনশন না দিয়ে যে অতিরিক্ত গ্রাচুইটি শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীরা নিয়েছেন তা সমন্বয় হয় কত বছরে তাও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন ছিলো।
তাই, আর সময়ক্ষেপণ না করে সিনিয়র পেনশনভোগীদের সমস্যার দ্রুত নিরসন হোক।