জন্মের পরই সুরাইয়া জাহানের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা চোখে পড়ে তার পরিবারের। শেরপুর সদরের আন্দারিয়া সুতিরপাড়ে সুরাইয়ার বেড়ে ওঠা। বাবা সফির উদ্দিন চরপক্ষীমারি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক, মা মুরশিদা সফি গৃহিণী। বাবা-মায়ের কাছে বোঝা নয় বরং তাদের আশার আলো হয়ে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সুরাইয়া।
এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন সুরাইয়া। পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে। সেখানেই কথা হয় সুরাইয়া জাহানের মা মুরশিদা সফির সঙ্গে।
তিনি বলেন ‘চলতে, লিখতে না পারা আমার বড় মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। তাই আমরাও তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি, চেষ্টা করি যতটা ভালো রাখা যায়। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে লড়াই করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে আমাদের খুশির শেষ থাকবে না। নজরুল ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারলে আমাদের জন্যও ভালো হয়। সুরাইয়াও এখানে ভর্তি হতে চায়। আল্লাহর ইচ্ছা, কপালে থাকলে হবে।’
সুরাইয়া চরকান্দারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক শাখায় মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১১ এবং শেরপুর মডেল গার্লস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪.০০ পেয়ে পাস করেন। হাতে না লিখতে পারলেও লিখেন পা দিয়ে। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে পৌঁছাতে একটু দেরি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় দেয়।
সুরাইয়ার মতো শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে এই কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন দেখা কৃষক পরিবারের সন্তান মো. সৈকত খান।
বেশ প্রত্যয়ের সঙ্গেই সৈকত বললেন, ‘আমি অনেক কিছুতে অক্ষম হলেও পড়াশোনা করতে ভালোবাসি। বেঁচে থাকা পর্যন্ত পড়াশোনা করতে চাই। নিজেকে যেন বোঝা মনে না হয় সেজন্য হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, তারা যেন পরীক্ষায় ভালোভাবে অংশ নিতে পারে সেজন্য আমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করেছি। এমনকি তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত সময়ও দেওয়া হয়।’
প্রবল মানসিক শক্তি থাকলে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা জয় করা সম্ভব। সুরাইয়া, সৈকতের মতো ইতিবাচক ইচ্ছাশক্তির আরেক উদাহরণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. মোখলেসুর রহমান। গতকাল শনিবার দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। প্রশ্নের উত্তর তিনি মুখে বলেছেন, পাশে তার সহযোগী তা লিখছেন উত্তরপত্রে।
মোখলেসুর দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার ৩নং রামপুর ইউনিয়নের হুগলীপাড়া গ্রামের মো. নুর ইসলামের ছেলে। তার বাবা পেশায় একজন ভ্যানচালক।
দিনাজপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে শহরের রাজবাড়ীর গুঞ্জাবাড়ী প্রতিবন্ধী হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছেন মোখলেসুর। তিনি দিনাজপুর সরকারি সিটি কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৪২ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।