জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে ‘দৈনিক সংবাদ' পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিবৃতি দিয়ে প্রকাশ্যে এসছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। শুক্রবার সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক মো. ইব্রাহিম আলী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিবৃতিতে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ১০ অক্টোবর "জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে: গোপনেই সব দখলে নিতে মরিয়া শিবির" শিবির শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদেন ছাত্রশিবিরের শাখা সভাপতির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রচারিত বক্তব্যকে মিথ্যা বলে দাবি করা হয়। এ বিষয়ে শাখা সভাপতির সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করেই প্রতিবেদকের মনগড়া বক্তব্য শাখা সভাপতির নামে প্রচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন শিকদার এবং সেক্রেটারি মো. আসাদুল ইসলাম যৌথ বিবৃতিতে বলেন, দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ১০ অক্টোবর 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে: গোপনেই সব দখলে নিতে মরিয়া শিবির' শিবির শিরোনামে শাখা শিবিরকে জড়িয়ে যে অভিযোগ গুলো আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রতিবেদনে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সাধারণ ছাত্রদের শিবির ট্যাগ দেওয়ার যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি একটি চরম মিথ্যাচার। আওয়ামী শাসনামলে ছাত্রশিবির ছাত্রলীগ কর্তৃক ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় ভয় ভীতি দেখিয়ে ছাত্রশিবিরের ভাইদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। মামলা হামলা দিয়ে শিবিরের জনশক্তিদের হয়রানি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অনেক দায়িত্বশীল ভাইয়ের অবৈধভাবে ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে এবং অনেক ভাই ছাত্রলীগের রোষানলে পড়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি। সুতরাং সাধারণ ছাত্রদের শিবিররের কর্মীদের দ্বারা শিবির ট্যাগ দেয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং প্রকাশ্য মিথ্যাচার।
নেতারা আরো বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন প্লাটফর্ম নিয়েও শিবিরের নামে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্ত ছড়ানো হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্লাটফর্মটি ছিল একান্তই সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি প্লাটফর্ম। আন্দোলনে যারা সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের দ্বারাই এই প্লাটফর্মটি পরিচালিত হচ্ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন নামে যে প্লাটফর্মটি আছে সেটি বিভাগ ভিত্তিক সকল শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত। অবকাশ ভবনের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিয়েও মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। অবকাশ ভবনের সকল সংগঠন তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত। প্রত্যেক ক্লাবের নির্ধারিত নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমেই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। সেখানে ছাত্রশিবিরের হস্তক্ষেপের প্রশ্ন তোলাটাই অযৌক্তিক।
যৌথ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রতিবেদনে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তালা ভেঙ্গে শিবির পন্থী সাংবাদিকরা সমিতি দখল করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সাংবাদিক সমিতির নিজস্ব সাংবাদিকরা তাদের কমিটির মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেখানে শিবিরের কোন হস্তক্ষেপ নেই।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে থেকে এবং সাথে নিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবি আদায়ে সবসময় অগ্রণীভূমিকা পালন করছে। তাই আমরা শাখা সংগঠনকে নিয়ে এমন মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দেশের প্রচলিত আইনের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি। পাশাপাশি সাংবাদিক বন্ধুদের সত্য সংবাদ প্রচারে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন গণিত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সেক্রেটারি মো. আসাদুল ইসলাম ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। প্রচার সম্পাদক মো. ইব্রাহীম আলী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রচার সম্পাদক ইব্রাহীম আলী জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত সাংবাদিক ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা নিউজ করেছে। ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সাধারণ ছাত্রদের শিবির ট্যাগ দেওয়া হয়েছে সেটি একটি চরম মিথ্যাচার। আমরা এসকল মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাই।
শাখা শিবিরের সেক্রেটারি মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রশিবিরকে নানা ধরনের ট্যাগ-অপবাদ দিয়ে আসছে। তার মধ্যেও ছাত্রশিবির কাজ কখনোই থেমে ছিলনা। ছাত্রশিবির অতীতে ছিল, এখনও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে আসবে জানতে চাইলে জবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এই বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, পরবর্তীতে জানানো হবে।