জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার। ওই মতবিনিময় সভায় প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন তাঁকে স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে উল্লেখ করেন। একটি রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় সভায় একজন বিচারপতির উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেওয়ায় বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে এনেছেন আইনজীবীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বারের প্যাডে ছয়জন নির্বাচিত প্রতিনিধি (বিএনপিপন্থী) প্রধান বিচারপতিকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করেন।
তাঁরা বিষয়টিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত আচরণবিধি ভঙ্গ বলে উল্লেখ করেন। সুপ্রিম কোর্ট বারের সিনিয়র সহসম্পাদক মাহফুজ বিন ইউসুফ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতিকে জানিয়েছি। ওই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এটি সংবিধানের লঙ্ঘন। দেখি প্রধান বিচারপতি কী পদক্ষেপ নেন।’ উল্লেখ্য, বারের ১৪ জনের কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদকসহ আট পদে রয়েছেন সরকার সমর্থক আইনজীবীরা। আর কোষাধ্যক্ষসহ ছয় পদে রয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
বিচারপতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট বারের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মাহফুজ বিন ইউসুফ ছাড়াও চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বারের কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সহসম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান এবং কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম আকতার জাকির, মো. মনজুরুল আলম (সুজন) ও কামরুল ইসলাম।
প্রধান বিচারপতির কাছে দেওয়া লিখিত চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট মিডিয়া এবং ভিডিও থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মনে করে এই ঘটনায় বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। তাই এ বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন তাঁরা।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের স্ত্রী ও ফুলছড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা রাব্বী বুবলী। তিনি প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে এবং ওই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বুবলী গণমাধ্যমকে বলেন, মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর বাবার অনুসারীরা গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাড়িতে আসেন। সে সময় বুবলীর স্বামী বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সেখানেই অবস্থান করছিলেন। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীরা ফজলে রাব্বী মিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়ার ব্যবস্থা করেন। বুবলী বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তে আমি নির্বাচন থেকে সরে আসি। পরে বাবার অনুসারীরা আমার বাড়িতে আসেন। প্রয়াত বাবার জন্য মোনাজাতের ব্যবস্থা করা হয়। তখন আমার স্বামী সে মোনাজাতে উপস্থিত ছিলেন।’ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার পর আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছিলেন রিপন। মোনাজাত শেষে তিনিও (মাহমুদ হাসান রিপন) আমার বাড়িতে আসেন। এরপর উপস্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে তিনি বক্তব্য রাখেন। এরপর আমার প্রয়াত বাবাকে নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন আমার স্বামী বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার।’