প্রধান শিক্ষক-সভাপতির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে নিয়োগে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি |

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক: স্কুলে ঘুষ দেওয়ার পরও মিলছে না চাকরি। প্রধান শিক্ষক আর স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধেই উঠেছে ঘুষের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।

এ টাকার ভাগের অংশ গেছে সংসদ-সদস্যের পকেটেও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেশি টাকা নিয়ে অন্য প্রার্থীকে নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন। আর এক প্রার্থীর ঘুষের পুরো টাকা নিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক স্কুলের চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া প্রধান শিক্ষকের ঘুষ স্বীকারোক্তির অডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভাইরাল সেই মোবাইল অডিওকে নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। অডিওতে সংসদ-সদস্যসহ ঘুষের টাকার ভাগ কে কত নিয়েছেন, সে কথা বলছেন খোদ প্রধান শিক্ষক।

দিয়াড়-ধাইনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী-তিন পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ তিন পদের বিপরীতে অন্তত ৭/৮ জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোট অঙ্কের অর্থ।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে চাকরির কথা বলে আল আমিন নামে এক প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক তালেবুর রহামন আর সভাপতি মনিরুল ইসলাম হাতিয়ে নেন ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আল আমিনের বাবা কৃষক আব্দুল মতিন অভিযোগ করেন, আমার ছেলের নিয়োগের জন্য জমি বিক্রি করে সভাপতিকে ৭০ হাজার এবং প্রধান শিক্ষককে দিয়েছি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আল আমিনের মা বলেন, সভাপতি আর হেডমাস্টার আমার ছেলেকে চাকরিও দিচ্ছে না, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।

অফিস সহকারী পদের জন্য সজীব নামে এক প্রার্থী প্রধান শিক্ষককে টাকা দিয়েছেন। সজীব জানান, চাকরি দেওয়ার কথা বলে তালেবুর মাস্টার আমাদের কাছ থেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন চাকরিও দিচ্ছে না, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম, বর্তমান ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন জানান, এ ঘটনায় আমরা সালিশ-বৈঠক করেছিলাম। হেডমাস্টার তালেবুর রহমান সজীবকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৩ লাখ ২০ টাকা নেওয়ার কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন এবং টাকা ফেরত দিতেও চেয়েছিলেন। কিন্ত পরে সেই টাকা তিনি ফেরত না দেওয়ায় বিচারকাজ সম্পন্ন হয়নি। এদিকে মোটা অঙ্কের অর্থ ঘুষ নেওয়ার পরও চাকরি না দেওয়ায় লিখিত অভিযোগ করেছেন দুই চাকরিপ্রার্থীর অভিভাবক।

প্রধান শিক্ষক তালেবুর রহমান ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এসব মিথ্যা-বানোয়াট, এগুলো ওদের ষড়যন্ত্র। অডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, রেকর্ডিংটি কার, এটি দেখতে হবে। পরে তিনি বলেন, এসব এডিট করে করা হয়েছে।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম নিজে টাকা গ্রহণের কথা অস্বীকার করে জানান, স্কুলের উন্নয়ন এবং আনুষঙ্গিক খরচের জন্য সব স্কুল, সব প্রতিষ্ঠানই টাকা নেয়, আমাদের স্কুল অনেক সমস্যায় জর্জরিত। অনেক টাকা লেনদেন হয়েছে, তবে সেটা স্কুলের স্বার্থে হয়নি।

 তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করায় আমরা ফিরে আসি। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে আমি শুনেছি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করিনি।

গোবরাতলা ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপু টাকা নিয়ে লোক নিয়োগের সুপারিশের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ-সদস্য আব্দুল ওদুদ দাবী করেন, স্কুলের সভাপতি আর প্রধান শিক্ষককে তিনি চেনেন না। নিজেদের বাঁচাতে তারা তাকে জড়িয়ে এসব কথা বলতে পারেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023949146270752