প্রধান শিক্ষককে তাড়িয়ে চেয়ারে বসলো ছাত্র!

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে ১৪-১৫ বছর বয়সী একটি ছেলে। এমন একটি ছবি গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে ছবিটি দেখে অনেকেই এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। পরে পরিচয় পাওয়া যায় ওই ছেলের।

ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। গত বুধবার শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করার পর প্রশাসনের সহায়তায় তিনি বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। পরে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে যান ছাত্র। তার নাম ইকরামুল হাসান। তিনি ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। ইকরামুল স্থানীয় কুরুইন গ্রামের আবুল হাসমের ছেলে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। 

এদিকে শুক্রবার ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা।

ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, টেবিলের ওপর থাকা প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেনের টেবিলে রাখা নেম প্লেট সামনে রেখে স্কুল ড্রেস ছাড়া সাদা পোশাকে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে আছে ছাত্র ইকরামুল। এ সময় ওই কক্ষে আর কাউকে দেখা যায়নি। 

এ ছবি প্রথমে নিজের ফেসবুকেই প্রথম আপলোড করে ওই ছাত্র লিখেন, ‘আমাদের সু-সম্মানিত আলমগীর স্যার কোথায়।’ 

ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে মুন্সী আজিম লিখেছেন, ‘পিতা-মাতার পরেই শিক্ষকের স্থান, শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি মানে দুনিয়া ও আখেরাত দুইটাই বরবাদ।’ আক্তার নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ফাইজলামির একটা লিমিট থাকা উচিত।’ 

পারভেজ নামে লিখেছেন, ‘স্বাধীন দেশের স্বাধীন ছাত্র।’ 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সকাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল- প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগ করেন ও বিদ্যালয়ের অর্থে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তাই তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে। খবর পেয়ে প্রথমে দেবীদ্বার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পরে দুপুরের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির সভাপতি নিগার সুলতানা সেনাবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ না করেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। 

এ বিষয়ে ছাত্র ইকরামুল হাসান বলেন, ‘সবাই অফিস কক্ষ ত্যাগ করার পর আবেগে চেয়ারে বসে ছবি তুলি, এটা আমার ঠিক হয়নি, সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমার ফেসবুক থেকেও তা বাদ দিয়েছি।’ 

শুক্রবার বিকেলে প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি- আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই, কোথায় এ দলের সদ্য পদও নাই। দেবীদ্বারে নাকি আমার দুটি বাড়ি আছে, তাও তাদের প্রমাণ দিতে বলেছি, ওরা প্রমাণ দিতে পারেনি। 

ওই প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য, ওরা হয়তো কারও ইন্ধনে ভুল বুঝে আন্দোলনে নেমেছে। অভিযোগ তদন্তের আগেই পদত্যাগে বাধ্য করা দেশে এখন যেন একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউএনও ও বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিগার সুলতানা বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমরা বিধি-মোতাবেক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অফিস থেকে বের হওয়ার পর তারই ছাত্র চেয়ারে বসে ফেসবুকে ছবি পোস্ট দেওয়ার যে ক্ষমাহীন ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। কোনো বিবেকবান ও সুস্থ ছাত্র এটা করতে পারে না।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032899379730225