শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষকের বিদায় বেলায় শত শত শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ভোলার দৌলতখান উপজেলার পশ্চিম জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার চন্দ্র দাস।
অশ্রুসিক্ত নয়নে ফুল দিয়ে বরণ করে শেষ বিদায় জানানো হয় তাকে। একজন শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অনুকরণীয় থাকবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
কর্মজীবন শেষে নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক চাকরিজীবীকে নিদিষ্ট একটা সময়ে অবসর নিতে হয়। কর্মগুণে সেই বিদায় যেমনি স্মৃতি হয়ে থাকে, তেমনি ভালোবাসায় মুগ্ধতা ছড়ায়। এভাবেই প্রিয় শিক্ষককে রাজকীয় বিদায় জানালেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রক্তন শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে সম্মাননা জানানোর পাশাপাশি ফুলেল শোভায় বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করে।
প্রিয় শিক্ষককে গাড়িতে উঠিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে স্কুলে নিয়ে আসেন। তারপর মঞ্চে উঠিয়ে সংবর্ধনা দেন। এ সময় চারপাশে পরিবেশ যেন ভারি হয়ে উঠে। শিক্ষাগুরুর ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
সাবেক শিক্ষার্থী তামান্না, রাসেলসহ অন্যরা বলেন, তিনি আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তার দেওয়া পথে আমরা অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, স্যারের স্মৃতি ভোলার নয়।
এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন- প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, ফয়সাল মিয়াজী, জামাল, আহসান, ইমন, মাকসুদ ও সনজু প্রমুখ।
প্রিয় স্যারের প্রতি আবেগ অনুভূতির প্রকাশ করেন ছোট ছোট সোনামনিরাও। বিদ্যালয়ে চতুর্থ ও ৫ম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আজকের পর থেকে স্যারকে আর স্কুলে দেখবো না। এটা খুবই কষ্টের।
সুকুমার দাসের শূন্যতা কখনই পূরণ হবার নয় বলে মনে করছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহে আলম হাওলাদার। তিনি বলেন, সুকুমার দাস অনেক ভালো শিক্ষক ছিলেন। তার মতো এমন একজন শিক্ষক পেলে আরও ভালো হবে।
৩৬ বছরের কর্মজীবনে শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেদে ফেলেন সুকুমার চন্দ্র দাস। আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি তাদের (শিক্ষার্থীদের) কিছুই দিতে পারিনি। কিন্তু তারা আমাকে এভাবে সম্মান করবে তা কখনও ভাবিনি। এটা আমার জন্য গর্বের ও আনন্দের।
স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভোলা-২ আসনের এমপি আলী আজম মুকুল। তিনি বলেন, একজন শিক্ষককে এভাবে সম্মান জানানোর উদ্যোগ প্রশংসণীয়। আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে দৌলতখান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম খানসহ প্রাক্তন, বর্তমান শিক্ষার্থী, সহকর্মী এবং শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।