রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ আইডিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছয় লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ৩ ডিসেম্বর লিখিত প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
এমপিওভুক্ত ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তাঁদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক ফকীর আবদুল কাদের বেতন বিলে স্বাক্ষর না করায় গত জুলাই মাস থেকে বেতন আটকে আছে। শিক্ষকেরা জানান, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফকীর আবদুল জব্বার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত ৬ জুলাই পদত্যাগ করেন।
শিক্ষকদের মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর ১৬ নভেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষককে বারবার বেতন-ভাতার বিলের কাগজে সই করতে অনুরোধ করলেও তিনি সই করেননি।
এসব বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১৯ জন শিক্ষক ইউএনও, জেলা এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এ নিয়ে ২৬ নভেম্বর গণমাধ্যমে ‘প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় পাঁচ মাস ধরে বেতন বন্ধ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এই পরিস্থিতিতে ইউএনও মো. জাকির হোসেন ২১ নভেম্বর দুই সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন।
তদন্ত কমিটির সদস্য মাসুদুর রহমান গতকাল সোমবার বলেন, ‘গতকাল রোববার আমরা লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনওর কাছে দাখিল করেছি। এর আগে আইডিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক ফকীর আবদুল কাদেরকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ জন্য তদন্তকাজে দেরি হয়।’
মাসুদুর রহমান জানান, ২৬ নভেম্বর প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতির বিষয়টি জানতে পেরে বিদ্যালয়ে হাজির হয়ে সব শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা হয়। প্রধান শিক্ষক লিখিত বক্তব্য দেন। শিক্ষকেরা জানান, গত জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন-বিলে প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষর না করায় ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা তুলতে পারছেন না। এই বেতন–ভাতা তুলতে প্রধান শিক্ষক ফকীর আবদুল কাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে এক মাসের সমপরিমাণ ছয় লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন—তদন্তে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। ঘুষ দাবির একটি অডিও রেকর্ড তদন্ত কমিটির হাতে আসে এবং প্রধান শিক্ষককে তা শোনানো হয়।
এর আগে স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষকদের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফকীর আবদুল কাদের। তবে ঘুষ দাবির অডিও রেকর্ডের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অডিট কর্মকর্তারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অডিট করতে আসেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অডিটে এসে তাঁরা প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীর এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকা দাবি করেন। শিক্ষক নেতারা যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছ থেকে তাঁরা টাকা নিয়ে থাকেন। আমি সেই টাকার জন্যই কাছে টাকা দাবি করেছিলাম।’
শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা ও জাতপাত তুলে গালাগালির বিষয়ে ফকীর আবদুল কাদের বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে, প্রতিষ্ঠান সুন্দর ও ভালোভাবে চলুক এবং যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুক, এটাই আমার প্রত্যাশা।’