বিরোধীদলীয় নেতা থাকা অবস্থায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন সন্ধানীর পাশে ছিলেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, সন্ধানীতে যখন ঢাকার বাইরে থেকে রক্ত আনতে ফ্রিজিংয়ের ব্যবস্থা ছিল না, তখন তিনি বিদেশ থেকে আনা নিজের পিকনিক ব্যাগ আমাদের দিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে তিনবার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন।
জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ ব্লকের অডিটোরিয়ামে সন্ধানী আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদা উৎসাহ দিয়ে আসছেন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ২ নভেম্বর স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকারের মাধ্যমে তিনিই রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবস পালনের সূচনা করেছেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সন্ধানী দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানে যে অবদান রেখে চলছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে, এখনো আমাদের অনেক মানুষ কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বে ভুগছে, যা কাম্য নয়। আমাদের মাত্র চার হাজারের কিছু বেশি কর্নিয়া দান করা হয়েছে। এটিকে আরো বাড়াতে হবে। আমরা পেশাদার রক্তদাতাদের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বের হয়ে এসেছি। এটি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সন্ধানী। এখন সন্ধানীর পাশাপাশি বাঁধন, রেড ক্রিসেন্টসহ অনেক সংগঠন স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম পালন করে আসছে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, সন্ধানীর মাধ্যমে দেশের চার হাজার কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এটি একটি বিরাট অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে জনগণের সাড়াদানের ফলে। তবে, এ বিষয়ে সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। অনেক সময় চক্ষুদানের অঙ্গীকার করা ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাদের পরিবারের বাধায় মরণোত্তর চক্ষুদান সম্ভব হয় না। আবার সঠিক সময়ে না জানতে পারায় কর্নিয়া সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এটি নিশ্চিতে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে স্বেচ্ছায় রক্তদানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ২৭ বছরে ৪০০০ হাজার কর্নিয়া দান করেছি। যেটি সংখ্যাগত হিসেবে খুবই কম। প্রতি বছরে সংখ্যাটি এমন হওয়া উচিত। আমরা বিএসএমএমইউতে প্রথম ক্যাডাভেরিক সার্জারির মাধ্যমে চারজন মানুষকে কিডনি ও কর্নিয়া দান করেছি। ২০ বছর বয়সী সারাহ ইসলাম মৃত্যুকালে ৪ জন মানুষকে সুস্থ জীবন দিয়ে গেছেন। এটি সম্ভব হয়েছে সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানার সম্মতি ও ঐকান্তিক ইচ্ছা শক্তিতে। আমাদের এ ধরনের ইচ্ছা শক্তি তৈরিতে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানকারী সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানা বলেন, সারাহ ১০ মাস বয়স থেকেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিল। এখানে তার ব্রেন টিউমার অপারেশনের পর সে দুইদিন বেঁচে ছিলেন। সে শুধু দুইজন মানুষকে চোখ নয়, তার দুইটা কিডনিও দিয়ে গেছে। সে অসুস্থ অবস্থাতেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে। মৃত্যুকালে সে তার দুইটি কর্নিয়া ও কিডনি দান করে গেছে।
এ সময় সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানা তার কর্নিয়া দান করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
অনুষ্ঠানে মিডায়া ব্যক্তিত্ব, ডা. আব্দুন নুন তুষার, জনপ্রিয় গায়িকা মেহরিনসহ অনেকে মরণোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকার নামায় সই করেন।