নাটোরের সিংড়ায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ট্যাব বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুই প্রতিষ্ঠানের ১২টি ট্যাব জব্দ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন। পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষকদের শোকজ করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুর রহমান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ সিংড়ার ৫৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট ৩১৮ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ট্যাব বিতরণ করা হয়। ট্যাব বিতরণের আগে বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকের কাছে নবম ও দশম শ্রেণির মেধা তালিকার প্রথম তিনজন (রোল ১, ২, ৩) করে মোট ৬ জন শিক্ষার্থীর তালিকা চাওয়া হয়।
অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো উপজেলার হুলহুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকেও তালিকা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই তালিকায় নবম শ্রেণির ৩ রোলের ওসমান গনির পরিবর্তে ট্যাব দেওয়া হয় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আল তৌফিক পরশের মেয়ে রোল ৭-এর শিক্ষার্থীকে। এছাড়া দশম শ্রেণির রোল ২-এর পূর্বাসার পরিবর্তে দেওয়া হয় রোল ৪-এর শিক্ষার্থীকে। ফলে ওই বিদ্যালয়ের ৬টি ট্যাবই জব্দ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অন্যদিকে উপজেলার পাঁচপাকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজের বিরুদ্ধেও ট্যাব বিতরণের একই ধরনের অভিযোগ ওঠে। ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মেধাক্রমে প্রথম তিনজনে থাকা মিলি খাতুন, ফারজানা খাতুন এবং দশম শ্রেণির বৃষ্টি খাতুনের বদলে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্যাব বিতরণ করা হয়েছে। এ অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের ৬টি ট্যাবও জব্দ করা হয়েছে।হুলহুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী পূর্বাসার বাবা হেলাল সরদার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ট্যাব আমার মেয়ের প্রাপ্য। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়নি। তার পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে ৪ রোলের শিক্ষার্থীকে।’
একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওসমান গনির বাবা ফজলু চন্দার বলেন, ‘বিতরণের দিন আমার ছেলেকে ট্যাব দেওয়া হয়নি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ৯ এপ্রিল বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আমার ছেলের হাতে ট্যাব দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে হুলহুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল বারী বলেন, ‘বিতরণের সময় অনিচ্ছাকৃত ভুলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে অন্যদের ট্যাব দেওয়া হয়েছিল। পরে আবার ফেরত নিয়ে মেধাবীদের দেওয়া হয়েছে।’
পাঁচপাকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল আজিজ বলেন, ‘বিষয়টি ভুল হয়েছে। এজন্য ট্যাবগুলো জমা দিয়েছি।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন, ‘অনিয়মের অভিযোগে পাঁচপাকিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও হুলহুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ট্যাব বিতরণে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। কেউ অনিয়ম করলে ছাড় দেওয়া হবে না। অনিয়মের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে দুই প্রধান শিক্ষককে শোকজ ও ১২টি ট্যাব জব্দ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সেগুলো বিতরণ করা হবে।’