প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বাংলাদেশীদের তারা যে দেশের জন্য কাজ করেন, সেসব দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। আইনভঙ্গ করে কেউ কোন অপরাধে যুক্ত হলে বাংলাদেশ তাদের বাঁচাতে ন্যূনতম প্রচেষ্টাও চালাবে না বলে সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার (৮ মার্চ) বাংলাদেশ এমএইচ স্কুলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোন ব্যক্তির অপরাধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে এটা আর বরদাস্ত করা হবে না।’
তিনি বলেন, যে দেশে থাকবেন সে দেশের আইন মেনে চলতে হবে। যেমন- আপনি কাতারে আছেন, এদেশের যেটা প্রচলিত আইন সেটা আপনাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, কেউ যদি এই আইন ভঙ্গ করেন বা আইন ভঙ্গ করে কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন সেই দায় দায়িত্ব কিন্তু আমরা (সরকার) নেব না, কেউ নেবে না। যে দেশে অবস্থান করেন সেই দেশের আইন যদি না মানেন তাহলে সেদেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে এবং এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। কোন অপরাধীর দায়িত্ব সরকার নেবে না।
‘কেউ যদি কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে সেটা থেকে কিন্তু আমরা উদ্ধার করার কোন চেষ্টা করবো না, কোন ব্যবস্থাও নেব না, সেটা স্পষ্ট বলে দিচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, একজনের জন্য অন্য মানুষগুলো কষ্ট পায়। তাদের বিপদ হয়। সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েই লোক পাঠাতে চাই। যে প্রশিক্ষণটাও অনেকে ঠিকভাবে নেন না।
ট্রেনিংয়ের সময়কার টাকাটা নিয়ে অনেকে ঘুষ দিয়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন মর্মে তথ্য রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্তত সকলকে এই বার্তাটা পৌঁছে দেবেন এখানে কেউ যদি কোন অপরাধ করেন সেই অপরাধের দায় দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। এটা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই। কারণ, আমাদের এসব কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং প্রবাসে লোক পাঠাবার যে সুযোগটা আমরা পাই সে সুযোগটাও হারিয়ে যায়। আরও ১০টি মানুষের কাজের যে সুযোগটা থাকে সেটা তারা পায় না। একটি মানুষের অপরাধের জন্য অন্য মানুষ শাস্তি পায়, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় আপনারাও বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন আমার দেশ বাংলাদেশ। সেখানে কারো কোন অপরাধের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এটা কিন্তু মেনে নেয়া যায় না। এটা সহ্য করা যায় না।
তার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই এবং এতিম ও নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে দেশে এসেছেন (’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে) কেবল দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য।
তিনি বলেন, ‘আজকে অন্তত এটুকু বলতে পারি দেশের মানুষের জন্য দু’বেলা দু’মুঠো খাবার ব্যবস্থাটা করতে পেরেছি। তাদের জীবন মান উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। গৃহহীনকে ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, রাস্তা-ঘাট যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামান্য একটু বেশি পাওয়ার লোভে অনেক সময় বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সেটা আপনাদের বিবেচনায় থাকা উচিত।
এ সময় ধোঁকায় পড়ে বিদেশে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার না হয়ে তার সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার জন্যও সকলকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে আজকে বাংলাদেশে শবে বরাতের রাত হওয়ায় সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ারও দৃঢ় প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করেন।