প্রভাষকদের পদোন্নতির রূপরেখায় শিক্ষকদের মত জানানোর সুযোগ

রুম্মান তূর্য |

নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে বেসরকারি কলেজ প্রভাষকদের পদোন্নতিতে সার্বিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতিকে দেয়া হচ্ছে। মোট ৯টি সূচকে প্রভাষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হবে। নয়টি সূচকে প্রভাষকদের মূল্যায়নের পর অধ্যক্ষ তা গভর্নিং বডির সভায় উপস্থাপন করবেন।  বডির অনুমোদন পাওয়ার পর প্রভাষকরা অনলাইনে আঞ্চলিক পরিচালক বরাবর পদোন্নতির আবেদন করবেন। এভাবেই প্রভাষকদের পদোন্নতির রূপরেখার খসড়া করা হয়েছে। খসড়াটির ওপর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষকদের মত নেবে। পরে তা চূড়ান্ত অনুমোদন করা হবে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও প্রভাষকদের পদোন্নতির রূপরেখা তৈরি কমিটির আহ্বায়ক ফৌজিয়া জাফরীন গতকাল সোমবার দৈনিক আমাদের বার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, ৯টি সূচকে প্রভাষকদের মূল্যায়নের পর পদোন্নতির জন্য রূপরেখার একটি খসড়া করা হয়েছে। এমপিও প্রাপ্তির জ্যেষ্ঠতা, পরীক্ষার ফল, ক্লাসে উপস্থিতি, নেতিবাচক রেকর্ড না থাকা, বিভাগীয় মামলা না থাকা, সৃজনশীল দৃষ্টান্ত, ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়ার দক্ষতা, এমফিল-পিএইচডিসহ উচ্চতর ডিগ্রি, গবেষণা কর্ম ও স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধে মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রভাষকদের পদোন্নতির সুযোগ রেখে রূপরেখার খসড়া করা হয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব আরও জানান, প্রভাষকদের পদোন্নতির রূপরেখার খসড়াটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তর শিক্ষকদের ফিডব্যাক বা মতামত নেবে। তারপর তারা আবারও তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। পরে রূপরেখাটি চূড়ান্ত করা হবে।  

এদিকে মন্ত্রণালয়ের অপর এক সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানের সভাপতিকেই প্রভাষকদের পদোন্নতির ‘স্টিয়ারিং হুইলে’ বসিয়ে পদোন্নতির রূপরেখার খসড়া করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের ‘মাথার ওপর ছড়ি ঘোরানোর’ নতুন সুযোগ পাচ্ছেন সভাপতিরা। সম্প্রতি জারি হওয়া বেসরকারি স্কুল-কলেজের নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে বিভিন্ন কলেজে কর্মরত প্রভাষকদের অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়। ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজের প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হলেও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের প্রভাষকদের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, মূল্যায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ একটি কমিটি গঠন করবে। সেই কমিটির সূচকগুলো মূল্যায়ন করে পদোন্নতি দেওয়া হবে। পদোন্নতির খসড়ায় সে কমিটি কিভাবে হবে, কে কে থাকবেন তাও উল্লেখ করা হয়েছে।

নতুন নীতিমালায় প্রভাষকদের পদোন্নতিতে ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। নীতিমালা অনুসারে, এমপিও প্রাপ্তির জ্যেষ্ঠতায় ১৫ নম্বর, পরীক্ষার ফলে ১৫ নম্বর, ক্লাসে উপস্থিতি ২০ নম্বর, নেতিবাচক রেকর্ডে না থাকলে ২০ নম্বর, বিভাগীয় মামলা না থাকলে ৫ নম্বর, সৃজনশীল দৃষ্টান্তে ১০ নম্বর, ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়ার দক্ষতায় ১০ নম্বর, এমফিল-পিএইচডিতে ৫ নম্বর, গবেষণা কর্ম ও স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ থাকলে ১০ নম্বরসহ মোট ১০০ নম্বরে মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রভাষকদের পদোন্নতির সুযোগ রেখে রূপরেখার খসড়া করা হয়েছে।

পদোন্নতির খসড়া রূপরেখায় বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে আগের বছরের জন্য ৯টি সূচকে ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন করবেন। একই সঙ্গে ৫০ শতাংশ প্রভাষকদের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে গভর্নিং বডির সভায় ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করবে। কমিটির সভাপতি হবে গভর্নিং বডির সভাপতি বা তার প্রতিনিধি। এ কমিটির সদস্য হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা তার প্রতিনিধি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষক প্রতিনিধি। আর কমিটির সদস্য সচিব হবেন অধ্যক্ষ। এ কমিটি সর্বশেষ ৮ বছরের সূচক মূল্যায়ন করে পদোন্নতির জন্য প্রভাষকদের সুপারিশ করে তা গভর্নিং কমিটির সভায় পেশ করবেন। গভর্নিং বডি সভায় পদোন্নতির সুপারিশ অনুমোদন করে প্রভাষকদের পদোন্নতির আবেদন অনলাইনে আঞ্চলিক কার্যালয়ে দাখিল করবেন।

প্রভাষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে নম্বর বণ্টন করা হচ্ছে সেখানেও গভর্নিং বডির কর্তৃত্ব থাকছে। অনুকরণীয় সৃজনশীল দৃষ্টান্তের ১০ নম্বর পেতেও প্রভাষকদের গভর্নিং বডির অনুমোদন লাগবে। আর এমফিল-পিএইচডি করতে ও গবেষণার জন্য প্রচলিতভাবেই প্রভাষকদের গভর্নিং বডির অনুমোদন লাগে। এমফিল-পিএইচডির জন্য নির্ধারিত ৫ নম্বর, গবেষণার ১০ নম্বরেও গভর্নিং বডির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ থাকছেই।
খসড়া রূপরেখায়, পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতায় ১৫ নম্বর, পরীক্ষার ফলে ১৫ নম্বর, ক্লাসে উপস্থিতি ২০ নম্বর, নেতিবাচক রেকর্ডে না থাকলে ২০ নম্বর, বিভাগীয় মামলা না থাকলে ৫ নম্বর পাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ১ দিন অনুপস্থিতির জন্য উপস্থিতির ১ নম্বর করে কাটা যাবে বলে উল্লেখ আছে। জ্যেষ্ঠতার ১৫ নম্বরের ক্ষেত্রে খসড়ায়  বলা হয়েছে, এমপিওভুক্তির ৮ বছরে প্রভাষকরা ৮ নম্বর পাবেন। এরপর প্রতি এক বছরে জ্যেষ্ঠতার জন্য প্রভাষকদের ঝুলিতে ১ নম্বর করে যুক্ত হবে।

নীতিমালা অনুসারে শিক্ষাজীবনে ভালো ফলের জন্য প্রভাষকরা ভালো নম্বর পাবেন। এক্ষেত্রে রূপরেখায় খসড়ায় এসএসসিতে ৩ নম্বর, এইচএসসিতে ৩ নম্বর, ডিগ্রিপাসের জন্য ৬ নম্বর, অনার্সের জন্য ৯ নম্বর ও মাস্টার্সের ফলের জন্য ৩ নম্বর পাবেন প্রভাষকরা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051400661468506