দেশের উচ্চশিক্ষা খাতকে এগিয়ে নিতে হলে প্রযুক্তি সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, প্রযুক্তি সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের কোন বিকল্প নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি তাদের উদ্ভাবন সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দিতে হবে। শুধু ব্যবসা সম্প্রসারণের হাতিয়ার হিসেবে নয় বরং মানব কল্যাণে প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য ওপেন রিসোর্স তৈরি, ব্যবহার এবং অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক এক কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভা প্রধানের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও কমনওয়েলথ এডুকেশনাল মিডিয়া সেন্টার ফর এশিয়ার (সেমকা) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচদিনের এ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, সেমকার পরিচালক প্রফেসর ড. মাধু পারহাড় এবং সিনিয়র প্রোগাম অফিসার (এডুকেশন) ড. মানস রঞ্জন পানিগ্রাহী। ইউজিসির আইএমসিটি বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূইয়া কর্মশালায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রফেসর সাজ্জদ হোসেন আরও বলেন, বর্তমান সরকার ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলদেশকে উন্নত দেশের কাতারে শামিল করতে এং ২০৭১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। দেশের উচ্চশিক্ষা খাতের অগ্রগতির ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। তাই দেশের দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে উচ্চশিক্ষা খাতে গবেষণা ও উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্ব শ্রমবাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে।
প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের বলেন, প্রতিষ্ঠানিক ও জাতীয় পর্যায়ে ওপেন এডুকেশন রিসোর্স পলিসি প্রণয়নে শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইউজিসি ও সেমকা যৌথভাবে কাজ করছে। শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা না গেলে গুণগত শিক্ষা কোনভাবেই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। ওপেন এডুকেশন রিসোর্স পলিসি প্রণয়নের বিভিন্ন দিকে নিয়ে আগামী কয়েক মাসে একাধিক কর্মশালা আয়োজন করার প্রক্রিয়া চলছে। এসব কর্মশালায় অনলাইন শিক্ষা, ব্লেন্ডেড লার্নিং, অনলাইন এসেসমেন্ট কৌশল, অনলাইন কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্টসহ ওপেন রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে যা বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষকদের ধারণাকে আরো শাণিত করবে।
ইউজিসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান বলেন, করোনা মহামারির এ সময়ে অনলাইন এডুকেশন ও ব্লেন্ডেড লার্নিং সিস্টেম উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। অনলাইন এডুকেশন ও ব্লেন্ডেড লার্নিংয়ের ধারণা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নতুন। এ শিক্ষাকে কার্যকর করতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, শিক্ষার্থীরা এ ব্যবস্থায় আগ্রহ হারাবে।
সেমকার পরিচালক প্রফেসর ড. মাধু পারহাড় তার বক্তব্যে শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মানে সমতা আনতে শিক্ষা সংক্রান্ত কন্টেন্টসমূহ একটি লাইসেন্সের আওতায় সকলের জন্য উন্মুক্ত করার ওপর জোর দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তৈরি করা লেকচার নোট, টেক্সট, অ্যাসাইনমেন্ট পেপার, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, গবেষণাপত্র ইত্যাতি উন্মুক্ত থাকলে একই বিষয়ের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে তা ব্যবহার করতে পারেন। এতে শিক্ষার বিস্তার সহজ হবে। এছাড়াও কন্টেন্ট তৈরিতে সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পাঁচ দিনের এই কর্মশালা শিক্ষকদের নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ওপেন রিসোর্স পলিসি তৈরিতে উৎসাহিত করবে।
পাঁচদিনের এই কর্মশালায় দেশের ১০ টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০ জন শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ট্রেজারার ও স্কুল অব বিজনেসের ডীন অধ্যাপক ড. মোস্তফা আজাদ কামাল কর্মশালার প্রথমদিনে সেশন পরিচালনা করেন।