প্রশ্নফাঁসে গ্রেফতার মতিঝিল আইডিয়ালের শিক্ষক মাকসুদা বরখাস্ত

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাকসুদা আক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সাক্ষরিত এক চিঠিতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের কথা বলা হয়েছে। 

মাকসুদা আক্তার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা মাধ্যম প্রভাতির সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি। 

সাময়িক বরখাস্তের চিঠিতে জানানো হয়েছে, মাকসুদা আক্তারের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিরপুর মডেল থানায় মামলাটি রয়েছে।

চাকরিতে নিয়োগের শর্তাবলী ভঙ্গের কারণে মঙ্গলবার থেকে সাময়িক বরখাস্ত কার্যকরের কথা বলা হয় চিঠিতে। 

এর আগে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মাকসুদা মালা, ঢাকার থ্রি ডক্টরস কোচিংয়ের পরিচালক ডা. বশিরসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের তিনজন হলেন মৈত্রী সাহা, জাকারিয়া আশরাফ ও ইভানা। অন্যজন হলেন সাবরিনা রেজা টুষি। তিনি রংপুর মেডিকেলের শিক্ষার্থী।

সিআইডি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসে জড়িত ১৯ চিকিৎসকসহ ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে, প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত বুধবার জানানো হবে।

তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষক মালা তার মেয়ে ইকরা বিনতে বাশারসহ ১০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তারদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল থেকে পাস করা ডা. অনিমেষ কুন্ডুর কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হন ডা. সাবরিনা রেজা টুষি, ডা. মৈত্রী সাহা ও ডা. জাকারিয়া আশরাফ। ডা. অনিমেষ এই তিনজনকে প্রাইভেট পড়াতেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে এক পরীক্ষার্থীর মামির বাসায় তাদের ফাঁস করা প্রশ্নপত্র পড়ানো হয়। প্রত্যেকের সঙ্গে ১০ লাখ টাকার চুক্তি ছিল, জামানত হিসেবে রাখা হয়েছিল চেক। মৈত্রী ও জাকারিয়া ঢাকা মেডিকেলের কে-৭৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী। আর সাবরিনা রেজা টুষি রংপুর মেডিকেলের শিক্ষার্থী। ঢাকা মেডিকেলের কে-৬৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. জাকিয়া ইভানা। ইভানাকে প্রশ্ন সরবরাহ করেন ফেইম কোচিংয়ের পরিচালক ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। এ ঘটনায় করা মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সংস্থাটি। এই ১২৫ জনের মধ্যে ৪৭ জনকে চার্জশিট দেওয়ার আগে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন তারা। তাদের মধ্যে ৪৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

সিআইডি জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলা তদন্তকালে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের একটি চক্রের সন্ধান পায় তারা। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে এস  

এম সানোয়ার হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে সিআইডি প্রথমবার জানতে পারে, ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তাদের দেওয়া তথ্যেই গ্রেপ্তার হন মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু। জসিম গ্রেপ্তারের পর একের পর এক জড়িতদের নাম বেরিয়ে আসে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তারা হলেন জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু, তার খালাতো ভাই প্রেসের মেশিনম্যান আব্দুস সালাম, পারভেজ খান, জাকির হোসেন দিপু, সামিউল জাফর সিটু, মো. আলমগীর হোসেন (জসিমের বোন জামাই), শাহজাদি আক্তার মীরা (জসিমের বোন), মোহাইমিনুল ইসলাম, রেদওয়ানুর রহমান শোভন, এস এম সানোয়ার হোসেন, ইমন খান (সালামের ছেলে), মনিরুল ইসলাম মাহি (বোনের ছেলে), আলমাস হোসেন ও কাওছার আহমেদ। তারা সবাই বর্তমানে জামিনে রয়েছে।

সিআইডি জানিয়েছে, মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নুকে প্রশ্নপত্র বের করে দিতেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যুরোর প্রেসের মেশিনম্যান আব্দুস সালাম। প্রশ্ন পাওয়ার পর সারা দেশে থাকা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রির কাজটি করতেন জসিম। সালাম-জসিমের সিন্ডিকেটে তাদের পরিবারের সদস্যরাও জড়ান। সঙ্গে যুক্ত হয় নামিদামি মেডিকেলে ভর্তি কোচিংয়ের মালিক ও শিক্ষকরা। তাদের মাধ্যমেই সারা দেশে প্রশ্নপত্র বিক্রি করে আসছিল চক্রটি। সর্বশেষ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে মেডিকেল ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ডেন্টালের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। এরপর আর প্রশ্নফাঁস করতে পারেনি চক্রটি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025579929351807