সরকারি চাকরিতে আমি একেবারে কোটার বিপক্ষে নই। কোটা কিছুটা থাকবে এবং সেটা তাদের জন্যই থাকবে যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম, যারা সুযোগ-সুবিধা ও সক্ষমতায় আমার আপনার চেয়ে পিছিয়ে আছে। যেমন-প্রতিবন্ধী কোটা থাকতে পারে এবং তা সর্বোচ্চ ২-৩ শতাংশ।
কিন্তু বাংলাদেশের মতো জনবহুল উন্নয়নশীল একটা দেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোটার এমন মাত্রা বিশ্বের আর কোথাও নেই। এটা মেধার চরম অবমূল্যায়ন ও বড় ধরনের বৈষম্য। অথচ একাত্তরে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করে বিজয় এনেছিলাম বৈষম্য দূর করতে।
এমনিতে দেশে চাকরির বাজারের অবস্থা করুণ, বিষয়ভিত্তিক জবমার্কেট নেই। যে যে বিষয় বা বিভাগে পড়ুক না কেনো সবাইকে দিন শেষে বিসিএস নামক এক অন্ধগলির পেছনে দৌড়াতে হয়। অন্ধগলির এই সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে ছুটতে হতাশার পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে উঠতে জীবনের আর কিছু বাকি না উচ্চশিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের।
এর মাঝে যদি বিধ্বংসী হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো ‘কোটা মিয়াকে’ যুক্ত করা হয়, তাহলে মেধার আর কোনো মূল্য থাকে না। তখন মেধাবীরা (যাদের সামর্থ্য আছে) দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেবেন, ভয়ংকরভাবে বাড়বে মেধাপাচার। দেশ হারাবে তার মেধাবী সূর্যসন্তানদের। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, একটা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ তার মেধাবী তরুণ প্রজন্ম।
‘কোটা মিয়ার’ এমন দৌরাত্ম্যে প্রকৃত মেধাবীদের আর রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ থাকে না। প্রকৃত মেধাবীরা যখন দেশশাসন থেকে বঞ্চিত হবেন তখন দেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির মুখ দেখবে না। দেশ চলে যাবে রসাতলে। প্রকৃত মেধাবীদের বাদ দিয়ে যখন পরিপূর্ণভাবে ‘কোটা মিয়াদের’ হাতে চলে যাবে রাষ্ট্রযন্ত্র, তখন দেশের সর্বত্র দুর্নীতি, অনিয়ম মাথাচাড়া দিয়ে ওঠবে, দেশ চলে যাবে অন্ধকারের অতলে।
সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশকে কারা কায়দা করে পিছিয়ে রাখতে চায়-এমন দুরভিসন্ধিমূলক পরিস্থিতিতে সে প্রশ্ন না ওঠে পারে না। দেশের স্বার্থেই সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট