শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সাত মাস আগে চট্টগ্রাম মহানগরের ৯ সরকারি কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অধিভুক্ত করার নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছাড়াই কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করার নির্দেশনা দেয়ায় সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। কলেজগুলো চবির আওতাভুক্ত হবে কিনা, তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন ৯ কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি চবি কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দৃশ্যমান কোনো পরিকল্পনা, অবকাঠামো ও নিয়মনীতি ছাড়াই অধিভুক্তের সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। ঢাকার সাত কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ দেখা দিলে এক-দুই বছরের মধ্যেই তা ভয়াবহ সমস্যায় রূপ নেয়। এখন দুদিন পর পরই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতি চট্টগ্রামেও সৃষ্টি হবে কিনা- তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছাড়া ৯ কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পক্ষে নন শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকরা। জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিলে দুই দফায় চট্টগ্রামের ৯টি সরকারি কলেজকে চবির অধিভুক্ত করার নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সে সময় উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। কলেজগুলো হলো- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ, স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ ও সাতকানিয়া সরকারি কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ ও পটিয়া সরকারি কলেজ।
অধিভুক্তির নির্দেশনা পেয়ে তৎকালীন চবি উপাচার্য আবু তাহের কলেজগুলোর অধ্যক্ষের সাথে একটি সভা করেন। সেখানে দীর্ঘ আলোচনার পর নতুন সেশন অর্থাৎ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে কলেজগুলোকে চবির অধিভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরমধ্যে ছাত্র আন্দোলন, সরকার পরিবর্তন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিতে অধিভুক্তির বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।
নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন প্রশাসনিক কাঠামো ঢেলে সাজিয়েছেন। তবে এখনও ৯ কলেজকে অধিভুক্তের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এর বাইরে পরিকল্পনা ছাড়া ৯ কলেজের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিলে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে প্রতিষ্ঠানটিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত জনবল ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে নিজস্ব শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পরীক্ষা নেয়া ও ফল তৈরিতে বিলম্বের কারণে বেশ কয়েকটি বিভাগে রয়েছে সেশনজট। নিজ শিক্ষার্থীদের বাইরে ৯ কলেজের শিক্ষার্থীর যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফল তৈরি করা, নতুন বর্ষে ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নিজেদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে কিনা, তা চবি কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখতে হবে।
চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চবির সীমাবদ্ধতা আছে। তাদেরও জনবল সংকট আছে। চবির ২৮ হাজার শিক্ষার্থীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে ৯ সরকারি কলেজ যুক্ত হলে টালমাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। পরিকল্পনা ছাড়া অধিভুক্তির দিকে আগালে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দ্বিধাদ্বন্দ্বের কথা জানিয়ে মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মাদ কামরুল ইসলাম বলেন, সরকার কোনো পরিকল্পনা ছাড়া ৯ কলেজকে চবির অধিভুক্ত করেছে। বিষয়টি নিয়ে গত এপ্রিলে চবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সভা হয়। সেখানে বিভিন্ন আলোচনা হয়। এর মধ্যে নতুন সেশন থেকে চবির অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু সেটা চূড়ান্ত কিছু ছিলো না। পরে চবি থেকে আমাদের জানাবে বলেছিলো।
কিন্তু আর কোনো আপডেট আমরা পাইনি। এখন নতুন সেশন কী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে, তা আমরা জানি না। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা আমাদের প্রশ্ন করেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। এমনকি বিষয়টি নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত দেয়ার কোনো সুযোগও রাখা হয়নি। চবি কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
চবির উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, আমরা নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েছি। ৯ কলেজ অধিভুক্তির বিষয়টি নিয়ে অবগত আছি। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিছু দিনের মধ্যে জানতে পারবেন।