দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ নেই বলে জানিয়েছে সেন্টাল ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)। রবিবার (২৫ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সিডিপির আয়োজনে ‘প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি বিনোয়োগ : স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার গবেষণা জরিপে এসব তথ্য জানানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিডিপির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। জরিপে বলা হয়েছে বর্তমানে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের গড় সংখ্যা ৬ জন। যা শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১: ২৯ জন।
এছাড়াও জরিপে ৩০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪টি বিদ্যালয়ে ৫টির কম শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে আটটি বিদ্যালয়ে পাঁচটির বেশি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে এবং বাকি আটটি বিদ্যালয়ে পাঁচটি করে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।
সিপিডি সম্প্রতি গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও এবং নীলফামারী জেলায় স্থানীয় তরুণ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার ওপরে স্থানীয় প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণে তিনটি সামাজিক নিরীক্ষা পরিচালনা করেছে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের মোট ৪০৮ জনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এক তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ে। আবার প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়লে শিক্ষার্থীরা অপ্রত্যাশিত সমস্যায় পড়ে’। এমনকি প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়লে শিক্ষার্থী ফেল করবে বলে মনে করেন জরিপে অংশ নেয়া এক-তৃতীয়াংশ মানুষ।
বিগত পাঁচ বছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বাজেট ও জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ কমানো হয়েছে বলে উঠে এসেছে জরিপে। এতে বলা হয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এই মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। ২০২৩-২৪ কত বছরের বাজেটে তা কমিয়ে আনা হয়েছে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশে।
এছাড়াও মোট সরকারি ব্যয়ের একটি অংশ হিসাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ হয়েছে।
এই ৫ বছরে জিডিপির তুলনায়ও বরাদ্দ কমেছে। এই মন্ত্রণালয়ে জিডিপির তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। জিডিপির অংশ হিসাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ছিল ০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে ক্রমান্বয়ে যথাযথ সুযোগ সুবিধা সহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করা দরকার। এছাড়াও প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানো এবং প্রতিটি শিক্ষককে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা দরকার বলেও জোর দাবি করেন।