প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও নানা প্রতিকূলতার কারণে তা পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে একটা স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। তাও আবার প্রাইমারি স্কুলের। আমি সেটাই হতে চাচ্ছিলাম। ওইটা আমার খুব পছন্দের ছিল, কিন্তু হয়নি সেটা।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল রবিবার সকালে তার কার্যালয়ের শাপলা হলে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বই হস্তান্তরের মাধ্যমে ২০২৪ সালের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন।

আজ সোমবার থেকে সারা দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে না পারায় সে পথে হাঁটা হয়নি। সে সময় ছয় বছর প্রবাসে রিফিউজি জীবন কাটাতে বাধ্য হন তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা। সে সময় তাদের দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। তার বাবাকে পাকিস্তানি শাসকরা বারবার কারারুদ্ধ করে রাখায়ও তাদের লেখাপড়া বিঘিœত হয়েছে।

‘কিন্তু আমরা আমাদের পরিবারে লেখাপড়াকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই, আমাদের ছেলেমেয়েদেরও বলি, শিক্ষা হচ্ছে সম্পদ। এমন এক সম্পদ যা তোমাদের থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, তাই বিদ্যা অর্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তারা তাই করেছে এবং করছে’, বলেন তিনি।

তার সরকার বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বলতেন “শিক্ষায় যে খরচ সেটা হচ্ছে বিনিয়োগ” আমি সেভাবেই মনে করি। কাজেই এজন্য আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে যত টাকা লাগে আমি দেব। বিশ্বে যত নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তারা কীভাবে শিক্ষা দেয়, কী কারিকুলাম শিখায় সেই পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা সে রকম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলাদেশে তৈরি করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে হাতে-কলমে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। সবাই যে শুধু সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে তা নয়, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। আমরা সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। কলকারখানা গড়ে উঠবে সেখানে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের দ্বারপ্রান্তে, তার জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত নাগরিক আমাদের প্রয়োজন পড়বে। কাজেই উপযুক্ত কর্মঠ জনগোষ্ঠী আমাদের গড়ে তুলতে হবে। যারা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। ফলে দেশের উৎপাদন বাড়বে এবং দেশে বিনিয়োগ আসবে সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

নতুন বছর ২০২৪ সালের প্রাক্কালে বই বিতরণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন শ্রেণির বই তুলে দেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, নতুন বই পড়ে দেখা, এতে মলাট লাগানো এসবের আনন্দটাই আলাদা, বই পড়বে এবং বইয়ের যতœ নেবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘ছোট্ট সোনামণিদের আমি বলব, মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে, বাবা-মা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে এবং মানতে হবে। ক্লাসের বই মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে, পাশাপাশি জ্ঞান আহরণের জন্য অন্যান্য বইও পড়তে হবে।’ তাদের পরিবারে বই পড়ার চর্চাটা ছিল এবং এখনো তিনি সুযোগ পেলে পড়েন বলে জানান শেখ হাসিনা।

স্কুলে-স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন যেন দেখেও অনেক কিছু ছেলেমেয়েরা জানতে পারে, শিখতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা ইনকিউবেশন সেন্টার করেছি। যেখানে ট্রেনিং নিয়ে শুধু দেশে নয়, বিদেশও যাতে এরা কাজ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন একটি জাতি আমরা গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়ে যা যা করণীয় ইতিমধ্যে আমরা তা করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশটা যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। সেজন্য আমাদের কারিকুলামগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আজকে শিক্ষাকে আমরা যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি, তার ফলে আমাদের সাক্ষরতার হার অনেক বেড়ে গেছে। এ সাক্ষরতার হার যেখানে মাত্র ৪৪ ভাগ ছিল, সেখান থেকে আমরা আজকে ৭৬ দশমিক ৮ ভাগে উন্নীত করেছি।’

সরকারি-বেসরকারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেভাবেই বহুমুখী শিক্ষা দিয়ে আমরা জাতিকে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আর এজন্য কর্মঠ এবং দক্ষ জনসম্পদ আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে তার সরকারের সৃষ্ট বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ছেলেমেয়েরা নিজেদের সেভাবেই গড়ে তুলবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনও বক্তব্য রাখেন ।

মন্ত্রণালয়গুলো এ বছর ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি নতুন বই বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

দেশের প্রতিটি উপজেলায় ইতিমধ্যে পাঠ্যপুস্তক পাঠানো হয়েছে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036008358001709