ঈশ্বরদী পৌর এলাকার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাঁড়াগোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাঁড়াগোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়। এর পাশ দিয়ে চলে গেছে ঈশ্বরদী-রূপপুর রেললাইন। এই রেলপথ ধরে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে প্রতিষ্ঠান দুটির প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি ভাঙাচোরা থাকায় রেললাইন ধরেই হাঁটে তারা। এ কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। অথচ টনক নড়ছে না কারও।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয় ছুটির পর রেললাইন ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কিলোমিটার রেলপথ হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে বলে
স্থানীয়রা জানান, ঈশ্বরদী পৌর এলাকার টিপু সুলতান রোডটি প্রায় ১০ বছর ধরে ভাঙাচোরা। এই সড়ক দিয়েই দিনভর চলাচল করছে পাকশী ও সাঁড়ার বালুমহাল থেকে বালুবাহী ট্রাক, ঈশ্বরদী ইপিজেডের শ্রমিকবাহী নসিমন, করিমন, ভটভটি। এতে সড়কটি দিন দিন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও সড়কপথে স্কুলে যাতায়াত করতে পারে না শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় দুটিতে যাতায়াতের বিকল্প কোনো সড়কও নেই। নিরুপায় হয়ে রেললাইন ধরেই চলাচল করেন শিক্ষার্থীরা। শুধু শিক্ষার্থী না, এলাকার মানুষও রেললাইন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। ঈশ্বরদী থেকে পাকশীগামী রূপপুর প্রকল্পের মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য স্থাপন করা নতুন রেললাইন এটি।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শত বছরের পুরোনো পাইলট রেললাইনটি প্রায় ৩৫ বছর পরিত্যক্ত ছিল। এই রেললাইনে এত বছর কোনো ট্রেন চলাচল না করায় নিশ্চিন্তে চলাচল করতে পারতেন তারা। প্রায় দুই বছর আগে পরিত্যক্ত রেলপথটি সংস্কার করে নতুনভাবে চালু করা হয়েছে। এই রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। প্রায় সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নতুন রেললাইনের বেশ কয়েকটি স্থানে লেভেল ক্রসিং থাকলেও তা অরক্ষিত।
এই রেললাইন দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে আবির হাসান। সে বলে, ‘স্কুলে যাওয়া-আসার সময় ভয়ে থাকি কখন যেন ট্রেন চলে আসে।’ শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া জানায়, একদিন স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ মালবাহী ট্রেন এসে পেছন থেকে হুইসেল বাজায়। ভয় হুড়াহুড়ি করে সরে দাঁড়াতে গিয়ে তারা কয়েকজন আহত হয়। এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে সবসময় ভয়ে থাকি। স্কুলে যাওয়া কিংবা ছুটির পর বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ ট্রেন এসে পড়লে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে।’
আরেক অভিভাবক হাসান চৌধুরী জানান, সন্তানরা যখন স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় তখন থেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন তারা। ছেলে-মেয়ে বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত এক ধরনের অস্বস্তিতে থাকতে হয়। সাঁড়াগোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মতো শিক্ষকদেরও এই রেললাইন বেয়ে অথবা অতিক্রম করে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। আমরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে স্কুলের সামনের লেভেল ক্রসিংয়ে একটি গেট স্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেছি।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার শাহ্ সুফি নূর মোহাম্মদের সঙ্গে। তাঁর দাবি, লেভেল ক্রসিংয়ে রেলগেট স্থাপন করার কোনো বাজেট নেই। তা ছাড়া লেভেল ক্রসিং পাহারা দেওয়ার বাড়তি জনবলও নেই। টিপু সুলতান রোড সংস্কারের বিষয়ে ঈশ্বরদী পৌর মেয়র ইছাহক আলী মালিথার ভাষ্য, বর্তমানে এ রাস্তা সংস্কার করার মতো অর্থ পৌরসভায় নেই। তবে আগামী অর্থবছরে রাস্তাটি নতুনভাবে নির্মাণ করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে।