প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির বৈষম্য

মাহফিজুর রহমান মামুন |

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পূর্বে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় উভয়ের বার্ষিক ছুটি ছিলো একই অর্থাৎ বছরে ৮৫ দিন। তাই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি নিয়ে কোনো বৈষম্য ছিলো না।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ পরিবারে দেখা যায় পরিবারের একজন সন্তান মাধ্যমিকে অধ্যয়ন করলে অন্যজন প্রাথমিকে অধ্যায়ন করে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় প্রতিষ্ঠানের ছুটি একই হওয়ায় অভিভাবকরা উভয় প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সন্তানদের নিয়ে দাদা/নানার বাড়ি বেড়াতে যেতে পারেন। সরকার সম্প্রতি সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন কার্যকর করেন। তাই স্বাভাবিকভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ছুটি কিছুদিন কমে যাবে।

কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মাধ্যমিকের সমান ছুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারণের সেই রেওয়াজ ভুলে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে বিশাল এক বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন। মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য যেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বার্ষিক ৭৬ দিন নির্ধারণ করেছেন সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একলাফে মাধ্যমিকের চেয়ে ২২ দিন কমিয়ে মাত্র ৫৪ দিন নির্ধারণ করেছেন যা রীতিমতো বিশাল বৈষম্য।

প্রাথমিকের কোমলমতি শিশুদের জন্য যেখানে সবচেয়ে বেশি ছুটি প্রয়োজন সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কোমলমতি প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে কম ছুটি নির্ধারণ করে কি কল্যাণ বয়ে আনতে চান? তাছাড়া ছুটির তালিকার সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদরাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষকরা যখন পবিত্র রমজান মাসের শুরু থেকে সম্পূর্ণ রমজান মাস ছুটি ভোগ করতে পারবেন সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের রমজান মাসেও ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে যা অভিভাবকদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।

প্রাথমিক শিক্ষার্থীরাও রমজান মাসে রোজা রাখেন ও কুরআন পড়া শিখেন। তাহলে কীভাবে এ মাসে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে? তাছাড়া মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় না করে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ছুটি কমানোয় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন অভিভাবকরা। কারণ মাধ্যমিকে পড়ুয়া তাদের বড় সন্তান যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির সময় বাবা মায়ের সঙ্গে ঘুরতে যাবে তখন ছোট সন্তান (প্রাথমিকের শিক্ষার্থী) বিদ্যালয়ে যাবে। এটা কি অভিভাবকদের জন্য অস্বস্তিকর নয়? তাছাড়া অভিভাবকদের পরিবারের বড় সন্তান যখন রমজানে রোজা রেখে বাসায় বিশ্রাম করবেন তখন তারা তাদের কোমলমতি প্রাথমিকের শিক্ষার্থী সন্তানকে বিশ্রাম না দিয়ে তাদের নিয়ে বিদ্যালয়ে ছোটাছুটি করবেন।

এছাড়া অন্য সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ১২ দিন শীতকালীন অবকাশের ছুটি নির্ধারণ করেছেন সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ২ দিন শীতকালীন অবকাশের ছুটি নির্ধারণ করেছেন যা রীতিমতো হাস্যকর! ২ দিনের ছুটি কি কখনো শীতকালীন অবকাশ হয়? তাছাড়া প্রাথমিক শিক্ষকরা ভ্যাকেশনাল ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী। ভ্যাকেশনাল ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী হওয়ার কারণে তারা শ্রান্তি বিনোদন, অর্জিত ছুটিসহ বিভিন্নক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাই তাদেরও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষকদের মতো ভ্যাকেশনাল ছুটি ভোগ করার অধিকার রয়েছে। তাই বিনা কারণে ভ্যাকেশনাল ছুটি কমিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের সামাজিক ও মানসিকভাবে হেয় করা উচিত নয়। প্রাথমিক শিক্ষকদের মানসিকভাবে অসন্তুষ্ট রেখে কখনো মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ, বাস্তবতা অনুধাবন করে প্রাথমিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের কল্যাণের স্বার্থে মাধ্যমিকের সঙ্গে সমন্বয় করে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিকের বার্ষিক ছুটির তালিকা সংশোধন করে বার্ষিক ৭৬ দিন ছুটি নির্ধারণ করা হোক

লেখকঃ মাহফিজুর রহমান মামুন, শিক্ষক ও ব্লগার 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051620006561279