প্রাথমিক বৃত্তির ফল এমন হতো না যদি...

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার |

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমার কর্মকাল পাঁচ বছর।  ১৯৯৮ থেকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আমি ওই মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সহকারী সচিব ছিলাম। তখন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন ১৯৬৯ ব্যাচের সিএসপি ড. সা'দত হুসাইন। ২০১০ থেকে  ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আমি নিজেই সচিব ছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দায়বদ্ধতা, টিম স্পিরিট ও নজরদারি থাকলে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল নিয়ে এমনটি হবার কথা নয়।

এখন কেউ (কর্মকর্তারা) ঘটনার ভেতরে ঢুকতে চায় না, কড়া নজরদারি করতে চায় না, ভাসাভাসাভাবে কাজ করে সস্তা জনপ্রিয়তায় আনন্দ পায়, প্রধান লক্ষ্য থাকে কোনোভাবে দিন পার করে যাওয়া। ব্যর্থতাকে অপমান মনে করে না। মনে মনে আরো ভাবে, আমার তো রাজনৈতিক আশ্রয় আছে, আমার তো কোনো অসুবিধা নেই।  ফলে কাজে গাফিলতি হয়, বিভ্রাট ঘটে। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল নিয়েও তাই ঘটেছে।

যারা হাতেকলমে কাজ করেছেন, তাদের সিরিয়াসনেসে ঘাটতি ছিলো। যারা ওভার সি করার কথা তারা সেটা করেন নি। তাই কাজটিতে সমন্বয়হীনতা ছিলো। এমনটি হওয়া উচিত নয়। এতে সিভিল অফিসারদের কর্মদক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন বাড়ছে। 

একজন অফিসার কোন পদে কতদিন ছিলেন, কতো মন্ত্রণালয়ে কতোদিন সচিব ছিলেন, এটির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কে কোথায় কী অবদান রেখেছেন। নিজ কাজের তিনি প্রতি কেমন দরদী ছিলেন-এটাই হওয়া উচিত মূল বিবেচ্য বিষয়। 

অনারেবল খালিদ শামস ১৯৬৪ ব্যাচের সিএসপি। তিনি তাঁর ব্যাচের সম্মিলিত মেধা তালিকায় পুরো পাকিস্তানে প্রথম হন। টাঙ্গাইলের এসডিও থাকাকালে গভর্নর মোনায়েম খানের অন্যায় আদেশ পালনে অনীহা দেখানোর জন্য তৎক্ষনাৎ রাওয়ালপিন্ডিতে গিয়ে নতুন পদে যোগদানের নির্দেশ পেয়েছিলেন। তিনি মাথা উঁচু করে চলেও গিয়েছিলেন। মাত্র কয়েক মাস মহকুমা প্রশাসক ছিলেন। বরিশালের জেলা প্রশাসক পদ হতেও কয়েক মাসের মাথায় তুলে আনা হয়। সচিবও হতে পারেননি। অতিরিক্ত সচিব হিসেবে চাকরি ছেড়ে দেন।

তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের এক কিংবদন্তি। কারণ  মেধা, দক্ষতা, সততা, কর্ম তৎপরতায় ও আত্মমর্যাদাবোধে কোনো ঘাটতি ছিলো না।  তাই প্রায় সবাই তাঁকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করেন। তাঁকে উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিংবদন্তি ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করে পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেন।

আরেক ভদ্রলোক জোর তদবির করে ব্যাচের অনেককে ডিঙিয়ে সবার আগে অর্থাৎ স্বাভাবিক নিয়মে পদোন্নতির সুযোগ আসার আগেই সচিব  হন। অতঃপর ৮ বছরে একটির পর একটি করে ছয়টি মন্ত্রণালয়ের সচিব হন। তা সত্ত্বেও বলে বেড়ান যে, তাকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব করা হয়নি। অথচ স্বাভাবিক  নিয়মে তার মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখারও সুযোগ ছিলো না। তার জুনিয়র কাউকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব করাও হয়নি। তা সত্ত্বেও  এ ভদ্রলোক এমন কথাবার্তা বলে নিজের আত্মমর্যাদাকে ছোট করছেন। অনুজদেরকে বলবো কাজ করুন। নিজের কাজটা সুন্দর করে দরদ দিয়ে করুন। এতে ভালো থাকবেন। পদ গুরুত্বপূর্ণ। তবে পদের চেয়েও কাজ গুরুত্বপূর্ণ। পদের জন্য দরজায় দরজায়  ঘুরবেন না।

লেখক : এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার, সাবেক সচিব, লেখক ও গবেষক।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025160312652588