দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সর্বাধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইলে এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনা সাম্য, ন্যায্যতা, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সাবেক সরকারের নিয়োগকৃত আমলাদের অবিলম্বে প্রশাসন থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। ঐ সমস্ত আমলারাই একটি জনপ্রিয় সরকারকে স্বৈরাচার হতে সহযোগিতা করেছে।
ঐসব আমলারা হচ্ছেন ইতিহাসের অন্যতম স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দালাল, সমর্থক এবং দোসর। তারা শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হতে কোনো বাঁধাই দেন নাই, তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। তারা তাদের ক্ষমতা, পদ-পদবি এবং সুযোগ-সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত ছিলো। এতে রাষ্ট্রের, জনগণের কতটা ক্ষতি হলো সেটা তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় ছিলো না। এসব আমলারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে মেরুদণ্ড সোজা করে কখনোই দাঁড়াতে দেন নাই। আমাদের খনিজ সম্পদ নেই, আমাদের বিপুল পরিমাণ জমি নেই। আমাদের আছে অগণিত মানুষ। এই মানুষকে যদি সর্বাধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদ রূপান্তর করতে পারতাম। তাহলে বিপুল পরিমাণ মানবসম্পদ বিদেশে রপ্তানি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারতাম।
যার ফলে দেশ অচিরেই বিশ্বের প্রথম কাতারে আসন নিতে পারতো। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে শিক্ষকের ভূমিকা কতটুকু, শিক্ষকদের আর্থিক সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় সম্মান অতীতে কোথায় ছিলো আর বর্তমানে কোথায় আছে। ভবিষ্যতে কোথায় নিতে হবে সেটা ঐ সুচতুর আমলারা কখনও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করেন নাই। তারা শুধু একের পর এক কাজের পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছেন শিক্ষকদের ওপর।
যার কারণে শিক্ষকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। দিনের পর দিন তারা হতাশাগ্রস্ত, ক্লান্ত হয়ে পড়ছে যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে আরেক ফন্দি আঁটছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি করে শিক্ষকদের আবার প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ বিদ্যালয়ে কেবল অশান্তিই সৃষ্টি করবে। আদতে শিক্ষার কোনো উপকারে আসবে না।
সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টিকে কার্যকর করলে সহকারী শিক্ষকরা হতাশ এবং দিশেহারা হয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করবে যার মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর।
কর্মসংস্থানের উদ্দেশে যদি পদ সৃষ্টি করতেই হয় তাহলে বিদ্যালয়ে বর্তমানে যে পদ অপরিহার্য সেটা হলো ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’। অফিসের যাবতীয় কর্মকাণ্ড চালাতে বা করতে গিয়ে শিক্ষকরা ঠিকমত পাঠদান করতে পারছেন না। সিলেবাস ঠিকমত শেষ করতে পারছেন না। যার ফলে শিখনফলও অর্জিত হচ্ছে না।
সহকারী শিক্ষক পদটি ১০ম গ্রেডে উন্নীত করলে শিক্ষক সমাজ আরো বেশি উৎসাহ, অনুপ্রেরণা নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন এবং যেসমস্ত মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসছেন তারা পেশাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে দেশ সেবায় নিবেদিতভাবে কাজ করে যাবেন। আবার দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরাও শিক্ষকতা পেশায় আসতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। যার গুণগতফল দেশের জনগণ কয়েক বছরের মধ্যেই হাতেনাতে পাবে, ইনশাআল্লাহ।
আমলারা বিদেশি চক্রান্ত বাস্তবয়ন করতে সবসময়ই উঠেপড়ে লাগে কারণ এর বিনিময়ে তারা কোটি কোটি ডলার বাড়তি উপার্জন করে থাকে। আর বিদেশিরা কখনও চায় না তৃতীয় বিশ্বের দেশ স্বনির্ভর হোক, গরীব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াক। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মানুষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত হোক। তাই রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই আমলাদের এই অশুভ চক্রান্ত অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে হবে। তা না হলে যে বৈষম্যের বিরোধিতা করে জুলাই বিপ্লব শুরু হয়েছিলো এবং সফলতা লাভ করেছিলো, তা যে তিমিরে ছিলো সেই তিমিরেই থেকে যাবে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে সাবেক শীর্ষ আমলারা বিদায় হোক। অন্তবর্তী সরকারের কাছে এই প্রত্যাশা।
লেখক: সিনিয়র সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পরিষদ