বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অর্জিত একাডেমিক শিক্ষা সনদসমূহ শুধু চাকরি বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে না, পাশাপাশি জন্ম সনদ, নাগরিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক ডকুমেন্টের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রে এগুলোতে জন্ম তারিখ ও পিতা-মাতার নাম সঠিক কিনা তা নিশ্চয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আবেদনবিশেষ এসএসসির সনদ চাওয়া হয়। কেননা এসএসসি সনদগুলোতে আবশ্যকীয়ভাবে তা উল্লেখ থাকে। বুধবার (১১ অক্টোবর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত উপ সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
আবার এসএসসি সনদের ওপর ভিত্তি করেই সাধারণত পরবর্তী শ্রেণীর একাডেমিক ডকুমেন্টগুলোতে শিক্ষার্থী ও তার পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ করা হয়। কখনো-কখনো এসএসসি নিবন্ধনে শিক্ষার্থীদের যাচিত তথ্য ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয়। ফলে সনদেও ভুল লিখিত হয়।শিক্ষা বোর্ডের প্রচলিত নিয়মে সনদের ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক ডকুমেন্ট গুলোর পাশাপাশি প্রাথমিক সমাপনী কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সমাপনী সনদ চাওয়া হয়।
কিন্তু সমাপনী সনদেও ভুল থাকলে তা আগেই সংশোধন করতে বলা হয়। উল্লেখ্য, সমাপনী সনদ সংশোধনের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এফিডেভিট, শিক্ষার্থীর জন্ম সনদ, পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদ, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রত্যয়নসহ দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংশোধনীর বিজ্ঞপ্তি প্রয়োজন হয়। অনেক শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণিত সনদগুলোতে সংশ্লিষ্ট কিন্ডারগার্টেনগুলোর নাম উল্লেখ আছে কিন্তু করোনাকালীন সময়ে দেশব্যাপী বহু কিন্ডারগার্টেন স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বন্ধকৃত কিন্ডারগার্টেনগুলো হতে শিক্ষার্থীরা প্রত্যয়ন আনতে পারছে না। অথচ এদেরকেও প্রত্যয়নপত্র সংযুক্তির শর্ত জুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে; যা খুবই অবিবেচক মর্মে সাধারণ অভিভাবকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
যে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই নাই সে প্রতিষ্ঠান হতে কিভাবে প্রত্যায়ন আনবে? এই শর্ত জুড়িয়ে দেয়ার ফলে স্থবির হয়ে পড়ছে কিন্ডারগার্টেন হতে পাশ করা শিক্ষার্থীদের সনদ সংশোধন। বলা বাহুল্য, এতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট সংযুক্ত করার পরেও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের শর্ত বাড়তি খরচের বোঝা মর্মে অনেক শিক্ষার্থীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সকল ডকুমেন্ট জমা দেয়ার পরেও কমিটির নির্ধারিত মিটিং এর জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়। সেই মিটিং এ সংশোধনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এমন দীর্ঘসূত্রিতার ফলে প্রায় সকল শিক্ষার্থী যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এমনকি তাদের শিক্ষাজীবনেও যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের এনআইডি, পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে এসএসসির সনদ দাখিল করতে হয়। এমন দীর্ঘসূত্রিতার ফলে সময়মতো এগুলো না পাওয়ার ফলে তাদের বিদেশে চিকিৎসা অথবা পড়ালেখায় তারা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এসব শর্তের বোঝা ও দীর্ঘসূত্রিতার ফলে অনেক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক ঝামেলা এড়াতে নিরুপায় ও অসহায় হয়ে কোনো-কোনো থানা বা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রস্তাবিত ঘুষ দুর্নীতির ঘেরাটোপে পরছে। কালক্ষেপণ ও শর্তের বোঝা সংশ্লিষ্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ দুর্নীতিরই সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে বলে সচেতন মহল মনে করছে।
ইতোমধ্যে সরকার পিইসি ও জেএসসি এবং এই সমমানের পরীক্ষাসমূহ বাতিল মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এখন প্রশ্ন জাগে, তবে এসব সনদের কার্যকারিতা কি? কেনই বা পরবর্তী উচ্চতর সনদ সংশোধনের ক্ষেত্রে এসকল সনদ সংশোধন ও সংযুক্তির শর্ত জুড়িয়ে দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নাজেহাল করা হচ্ছে? বিগত দিনে যাদের পিইসি, জেএসসি ছিল না তাদের এবং এমনকি এ দুটি পরীক্ষা বাতিলের ফলে আগামী শিক্ষার্থীদেরও এমন অসহনীয় হয়রানির শিকার হতে হয় না, হবেও না। তবে কেন শুধু এ দুটি পরীক্ষাধীন শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে? সংশোধনী নীতিমালায় এরকম দ্বৈতনীতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এখন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ও সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। শিক্ষার্থীদের এহেন হয়রানি বন্ধ করে তাদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘœ ও সাবলীল করতে শীঘ্রই এ সমস্যার যুক্তিসংগত সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
লেখক : মাসুদুর রহমান , প্রাবন্ধিক