প্রাথমিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে নৃ-গোষ্ঠী ও দুর্গম চরাঞ্চলের শিশুরা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : গুণগত প্রাথমিক শিক্ষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দুর্গম চরাঞ্চলের শিশুরা পিছিয়ে পড়ছে বলে এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে।  

জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা শাপলা নীড় এবং সহায়ক সংস্থা হিসেবে গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র ও পাপড়ি গতকাল সোমবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় এডুকেশন রিপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব)- এর সদস্যদের সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ের অ্যাডভোকেসি ওয়ার্কশপে এ তথ্য জানায়।

  

শাপলা নীড় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন বিষয়ে কাজ করে আসছে। সহায়ক সংস্থা হিসেবে গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র ও পাপড়ির সহায়তায় শাপলা নীড় বর্তমানে দিনাজপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তিক নৃ-গোষ্ঠীর শিশু ও নরসিংদীর রায়পুরার দুর্গম চাঁনপুর চরাঞ্চলের প্রান্তিক শিশুদের শিক্ষা অধিকার বিষয়ে, ‘অধিকার প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। এ ইস্যুতে বিভিন্ন অংশীজনদের যৌথ প্রয়াসে সমন্বিত শিক্ষা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে প্রকল্পটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

প্রকল্পের শুরু থেকেই প্রান্তিক শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উভয় প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাসেবা প্রদানের পাশাপাশি, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে প্রকল্পটি। এরই ধারাবাহিকতায় এ আয়োজন করা হয়।

সভায় প্রান্তিক এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যু, বিশেষ করে চরাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ও প্রান্তিক নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়িত না হওয়া ও নিজস্ব কমিউনিটির শিক্ষক না থাকার বিষয়গুলো বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও তথ্যভিত্তিক উপস্থাপনার মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়।

উপস্থাপনার মাধ্যমে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রান্তিক নৃ-গোষ্ঠীর বিশেষ করে সাঁওতাল, তুরি, মুশোহর, রবিদাস, কর্মকার নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য দিনাজপুর সদর উপজেলার ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪০০ শিশুর জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ নেই, শুধুমাত্র ওরাও শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় প্রাথমিক বইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানেও কোনো আদিবাসী শিক্ষক নেই।  

অপরদিকে, নরসিংদীর প্রান্তিক চরাঞ্চলে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে লক্ষিত নয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৪০ শতাংশ শিক্ষক রয়েছেন (কোনো প্রধান শিক্ষক নেই), তাই নিয়মিত ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ২ হাজার ৫৯৩ জন শিশু। যার ফলে এসব প্রান্তিক শিশুরা গুণগত প্রাথমিক শিক্ষালাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং গুণগত প্রাথমিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে বা ঝরে পড়ছে। কিন্তু এসব দরিদ্রপ্রবণ প্রান্তিক অঞ্চলে গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে আরও বিশেষ সহায়তা থাকা ন্যায্য ছিল। তাই প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও পলিসি বাস্তবায়নকারীদের এই সব প্রান্তিক নৃ-গোষ্ঠীর ও দুর্গম চর এলাকার শিশুদের গুণগত শিক্ষা বিষয়ে দ্রুত দৃষ্টি দেওয়া ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ওয়ার্কশপে ইরাবের ২১ জন সদস্যসহ, গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র, পাপড়ি ও শাপলা নীড় এর সর্বমোট ২৯ জন প্রতিনিধি অংশ নেন এবং তাদের সুচিন্তিত মতামত দেন।  

শিক্ষা বিষয়ক এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে সফলতা পেতে হলে প্রান্তিক নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের ও দুর্গম চরাঞ্চলের প্রান্তিক শিশুদের পেছনে রাখার সুযোগ নেই এবং তাদের শিক্ষা অধিকারে সমসুযোগ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিক বিশেষ সুযোগ দিতে হবে বলে সভায় আলোচনা করা হয়।

ওয়ার্কশপের বিশেষ অতিথি ও শাপলা নীড় বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমোকো উচিয়ামা প্রান্তিক শিশুদের শিক্ষা অধিকারে অধিকার প্রকল্পের সমন্বিত এই উদ্যোগে অংশগ্রহণের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং এ-সংক্রান্ত পলিসি অ্যাডভোকেসি ইস্যুগুলো আরও অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন অংশীজনদের মাঝে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানান। ইরাব সভাপতি শরীফুল আলম সুমন প্রান্তিক শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তবচিত্র জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে তুলে ধরার জন্য গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র, পাপড়ি ও শাপলা নীড়কে ধন্যবাদ জানান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033562183380127