প্রাথমিকে বৃত্তি পাবে সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষার্থী

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

১৩ বছর পর বৃত্তি পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের। আগামীকাল শুক্রবার দেশজুড়ে প্রচলিত খাতার বদলে বুকলেটে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। এবার সারাদেশ থেকে বৃত্তি পাবে সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার এবং সাধারণ গ্রেডে ৪৯ হাজার ৫শ শিক্ষার্থী বৃত্তি পাবে। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসিক ৩শ টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসিক ২২৫ টাকা করে পাবে।

২০০৯ সালে হঠাৎ করেই জাতীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেয়া শুরু করে সরকার। প্রথমে শুধু সাধারণ ধারার শিক্ষায় এটি সীমাবদ্ধ ছিল। পরে মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (পঞ্চম শ্রেণির সমমান) পরীক্ষাও চালু করা হয়। ২০১০ সালে জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা চালুর পরই বন্ধ হয়ে যায় ৫ম ও ৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা। এদিকে করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে জেএসসি ও জেডিসি সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবারো বড় এই দুই পাবলিক পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হওয়া নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী, পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা থাকবে না বলে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে সরকার। এরপরই প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, এরই মধ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জেলা পর্যায়ে প্রশ্নপত্র পৌঁছে গেছে, ভেন্যু ও শিক্ষক ঠিক করা হয়েছে। আশা করছি উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেব। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বৃত্তির বিষয়ে এখনো তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহম্মদ বলেন, পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা চলবে। আপাতত এ পরীক্ষা বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরো বলেন, বৃত্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ ও এমসিকিউয়ের আদলে চার-পাঁচ লাইনের সংক্ষিপ্ত-উত্তর নেয়া হবে। কোনো নোট-

গাইড পড়ে পরীক্ষায় উত্তর করা যাবে না। নোট-গাইড থেকে প্রশ্নও করা যাবে না। কেউ প্রশ্ন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৃত্তি পরীক্ষার্থী শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড বাদ দিয়ে পাঠ্যবই অনুসরণ করার পরামর্শ দেন সচিব।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী বর্তমানে ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার এবং সাধারণ গ্রেডে সাড়ে ৪৯ হাজার ৫শ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির ক্ষেত্রে উপজেলাওয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যার ভিত্তিতে মোট বৃত্তির ৫০ শতাংশ ছাত্র এবং ৫০ শতাংশ ছাত্রীর মধ্যে জেন্ডারভিত্তিক মেধা অনুসারে এবং সাধারণ কোটায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক ৩ জন ছাত্র ও ৩ জন ছাত্রী হিসেবে মোট ৪৯ হাজার ৫শ বৃত্তি দেয়া হবে। বর্তমানে বৃত্তির টাকার পরিমাণ ট্যালেন্টপুলে ৩শ টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে ২২৫ টাকা।

গত ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে মেধাবৃত্তি দেয়ার বিকল্প মেধা যাচাই পদ্ধতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় বর্তমান প্রচলিত নিয়ম ও পদ্ধতিতেই প্রাথমিক বৃত্তি দেয়া অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে প্রচলিত খাতার বদলে বুকলেটে এ পরীক্ষা নেয়া হবে। এ পরীক্ষায় একজন পরীক্ষকই বুকলেটের ৪টি বিষয়ের মূল্যায়ন করবেন। প্রত্যেক শিক্ষককে ১০০টি বুকলেট মূল্যায়ন করতে হবে। প্রাথমিক বৃত্তির বুকলেট মূল্যায়নে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার অধিদপ্তর থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো এক চিঠিতে এসব নির্দেশনার বিষয়ে জানানো হয়।

আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান- এই ৪ বিষয়ে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বিষয়ে ২৫ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরে হবে পরীক্ষা। পঞ্চম শ্রেণির ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রশ্নপত্রসংবলিত বুকলেটে এ পরীক্ষা নেয়া হবে। বুকলেটের নির্ধারিত জায়গায় টিক চিহ্ন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লিখে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পৃথকভাবে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হবে না।

মঙ্গলবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো চিঠিতে বৃত্তি পরীক্ষার বুকলেট মূল্যায়ন নিয়ে অধিদপ্তর বলছে, দ্রুততম সময়ে বুকলেট মূল্যায়ন করতে হবে, তাই ১০০টি বুকলেট একজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন। একজন পরীক্ষক প্রতিটি বুকলেটের ৪টি বিষয়ই মূল্যায়ন করবেন। জেলা কমিটির নির্ধারিত স্থানে বুকলেট মূল্যায়ন করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো মার্কিং স্কিম ও নির্দেশনা অনুসারে বুকলেট মূল্যায়ন করাতে হবে।

অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরো জানানো হয়েছে, প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার গোপনীয় ডকুমেন্ট এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত নির্দেশাবলিতে ২০০ উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য একজন পরীক্ষক নিয়োগের নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের মতামতের প্রেক্ষিতে পরিমার্জিত নির্দেশনা দেয়া হলো। অধিদপ্তরের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বলেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023329257965088